বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশেষ ক্ষমতা পাচ্ছে মহেশখালী মাতারবাড়ী শিল্প কর্তৃপক্ষ

♦ শিল্প-কারখানায় বিশেষ শুল্ক সুবিধা দিতে পারবে ♦ পাওনা আদায়ে পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে নিতে পারবে ব্যবস্থা ♦ শ্রম অসন্তোষের কারণে শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে পারবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহেশখালী-মাতারবাড়ী এলাকায় শিল্প-কারখানা পরিচালনা করতে বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করতে যাচ্ছে সরকার, যে কর্তৃপক্ষ নিজস্ব এলাকায় শিল্প-কারখানাকে বিশেষ শুল্ক সুবিধা দিতে পারবে; পাওনা আদায়ে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে; এমন কি কোনো প্রতিষ্ঠানে শ্রম অসন্তোষ দেখা দিলে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের বরখাস্ত করতে পারবে।

মহেশখালী-মাতারবাড়ী শিল্প ও বাণিজ্যিক অঞ্চল আইনের খসড়ায় এ ধরনের কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি এই খসড়াটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মতামতের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত কর্তৃপক্ষ ১০ সদস্য বিশিষ্ট গভর্নিং বোর্ডের কাছে জবাবদিহি করবেন, যার চেয়ারম্যান হবেন প্রধানমন্ত্রী এবং ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন অর্থমন্ত্রী। খসড়ায় বলা হয়েছে, এ আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হবে, যার সম্পদ অর্জন, অধিকারে রাখা ও হস্তান্তরের ক্ষমতা থাকবে। কর্তৃপক্ষ স্বীয় নামে মামলা করতে পারবে এবং এর বিরুদ্ধেও মামলা করা যাবে। একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সরকার কর্তৃক নির্ধারিত প্রয়োজনীয়সংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে এ কর্তৃপক্ষ গঠিত হবে। নির্বাহী পরিষদ গভর্নিং বোর্ডের কাছে জবাবদিহি করবে।

কর্তৃপক্ষের কাজ : আইনের খসড়ায় কর্তৃপক্ষের কার্যাবলি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ভূমির যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, বিনিয়োগ উন্নয়নের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কৌশল গ্রহণ; শিল্প ও বাণিজ্যের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিতকরণ এবং অপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো অপসারণ; অধিক্ষেত্র ভূমি, স্থান ও ভবন অধিকতর উপযোগী করে ব্যবহারের জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বরাদ্দ প্রদান; দ্রুত শিল্পায়নের জন্য দেশি-বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগে প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদান; পানি সরবরাহ, নিষ্কাশন, জলাধার নির্মাণ; পর্যটন এলাকা চিহ্নিতকরণ, উন্নয়ন ও পরিচালনা করা; উদ্যোক্তা বিনিয়োগকারীদের যে কোনো সেবা সুবিধা, প্রণোদনা, লাইসেন্স, অনুমিত, পারমিট, ছাড়পত্র ইত্যাদি প্রদানের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্রবর্তন; কর্তৃপক্ষের এলাকায় ভূমি স্থাপনা, বরাদ্দ ও ভাড়া দেওয়া এবং কর, টোল, ফি সার্ভিস চার্জ ইত্যাদি নির্ধারণ ও আদায় করবে। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষ অধিক্ষেত্রাধীন অঞ্চলে উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যক্তি বা ডেভেলপার নিয়োগ করতে পারবে।

বিশেষ ক্ষমতা : খসড়া আইনে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে এই কর্তৃপক্ষ তার অধিক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত যে কোনো শিল্প কারখানার বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিদর্শন করতে পারবে; যে কোনো শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে তা পরিদর্শন ও অনুসন্ধান করতে পারবে। কর্তৃপক্ষের এলাকায় কোনো কোম্পানি বা শিল্প বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা থাকলে ওই পাওনা আদায়ে শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিক, পরিচালক বা পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কার্যধারা গ্রহণ করতে পারবে। এমন কি কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের শ্রমিক অসন্তোষে ওই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যবস্থাপনা বা শ্রমিক-কর্মচারীর যুক্ত থাকার প্রমাণ পেলে তাদের বরখাস্ত করাসহ প্রতিষ্ঠানের কার্যকর বন্ধ রাখার নির্দেশ দিতে পারবে। এ ছাড়া বলবৎ আইনে যাই থাকুক না কেন, নিজস্ব অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত শিল্প-কারখানার ক্ষেত্রে বিশেষ শুল্ক সুবিধা প্রদান করতে পারবে।

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ২৮টি সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের জন্য প্রায় ৪৭ হাজার ৮৫৭ একর জমি বন্দোবস্ত বা অধিগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে মহেশখালীরটি হতে যাচ্ছে মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরীর পরই দেশের সবচেয়ে বড় অঞ্চল। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত এলাকাকে, যেটি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ একটি সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ করছে এবং জাপানের অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করা প্রতিবেদন অনুযায়ী মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত এলাকায় ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়টি প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ৭৮ হাজার কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয়ের আরও ছয়টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলমান। এর বাইরে আরও ৫৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে মাতারবাড়ী এবং এর সংলগ্ন মহেশখালী ও ধলঘাটে। জাপানের অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকা ঘিরে লজিস্টিক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং অন্যান্য শিল্পে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার সরাসরি বিনিয়োগ করবেন সে দেশের বেসরকারি উদ্যোক্তারা। বাকি ১০ বিলিয়ন ডলার সহজ শর্তে বাংলাদেশকে ঋণ দেবে জাপান।

 

সর্বশেষ খবর