সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেফতারে সরকারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় আগামী ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। পরে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগ বলেছেন, যেহেতু আপিলটা ফাইল হয়েছে, হাই কোর্ট আইনটি বাতিল করেছে। এটা আমাদের দেখতে হবে। এখন দেখা পর্যন্ত যদি স্থগিত না করি, তাহলে রায় কার্যকর হয়ে যাবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আগামী ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত হাই কোর্টের রায়টি স্থগিত করেছেন। এর মধ্যে সরকারকে বলেছেন নিয়মিত আপিল ফাইল করার জন্য। আমরা আশা করি, নিয়মিত আপিল ফাইল করার পর শুনানি শেষে আদালত যথাযথ আদেশ দেবেন। সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতারে পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল করে গত ২৫ আগস্ট রায় দেন হাই কোর্ট। আদালত বলেছেন, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪১ (১) ধারা বেআইনি, সংবিধান ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী। পরে এই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২৫ আগস্ট রায়ে হাই কোর্ট বলেন, সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর ৪১ (১) ধারা বেআইনি, সংবিধান ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী। আদালত বলেছেন, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে আছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। তারপরও ৪১ (১) ধারা করে সেখানে সরকারি কর্মচারীদের আলাদাভাবে একটি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তা কোনোভাবেই সংবিধান সম্মত নয়। এ আইনটি অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪১ (১) ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না এবং সংবিধানের ২৬ (১) (২), ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর রুল জারি করেন হাই কোর্ট। ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইনের গেজেট জারি করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক গেজেটে বলা হয়, ১ অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকর হবে। আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে করা ফৌজদারি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে তাকে গ্রেফতার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে।
