শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ঋণের চাপে তিন পরিবার আত্মগোপনে

নীলফামারী প্রতিনিধি

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় লাপাত্তা হয়েছে সংখ্যালঘু তিন ভাইয়ের ১৫ সদস্যের পরিবার। নিখোঁজের ৯ দিন গত হলেও তাদের হদিস মেলেনি। উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ভুজারীপাড়ায় তিন ভাইয়ের পরিবারে এ ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিভিন ঋণদাতা সংস্থার ঋণের চাপে নিরুদ্দেশ হয়েছেন তারা। এদিকে উধাও তিন পরিবারের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলছে। কোলাহলমুখর বাড়িঘরে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। পুলিশ বলছে, নিখোঁজ তিন ভাইয়ের পরিবারের সন্ধানে তৎপরতা চলছে। অন্যদিকে উধাও পরিবারগুলোর তালাবদ্ধ বাড়িঘরের নিরাপত্তায় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে রাতে গ্রামপুলিশ দিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জুন জানান, তার ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই ভুজারীপাড়া। এ পাড়ার তিন ভাই কমল চন্দ্র সূত্রধর, পরিমল চন্দ্র সূত্রধর ও নির্মল চন্দ্র সূত্রধর। বড় ভাই কমল চন্দ্র পেশায় দিনমজুর। অন্য দুই ভাই পরিমল চন্দ্রের রয়েছে ইউনিয়নের পোড়ারহাটে মিষ্টির দোকান এবং নির্মল চন্দ্রের মেসার্স শুভ ট্রেডার্স নামে ধান, চাল, গম, ভুট্টার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, এলাকায় বড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নির্মল চন্দ্র সূত্রধর ঋণদাতা সংস্থা ব্র্যাক, আশা, গাক, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন, টিএমএসএস নামক এনজিওসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ গ্রহণ করেছেন। এতে তার ঋণের বোঝা ভারী হয়ে যায়। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি টাকা। ঋণদাতা সংস্থাগুলো ঋণের কিস্তির টাকা আদায়ে চাপ দিলে ২৩ আগস্ট রাতের কোনো এক সময় ওই তিন ভাই পরিবার নিয়ে লাপাত্তা হন। এ নিয়ে কথা হয় ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা পূর্ব হাজীপাড়ার পাওনাদার ধান ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন শাহর সঙ্গে। তিনি জানান, ধান-চাল ব্যবসায়ী নির্মল চন্দ্রের কাছে তিনি ধান বিক্রির ৩০ লাখ টাকা পাবেন। কিন্তু তাদের সন্ধান না পাওয়ায় পাওনা টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। এ ছাড়া এলাকার কয়েকজন ধান ব্যবসায়ী তার কাছে ৫১ লাখ টাকা পাবেন বলে জানান তিনি। উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের নীলফামারী সদরের কাজীরহাট শাখার ম্যানেজার আইয়ুব আলী জানান, ব্যবসায়ী নির্মল চন্দ্র সূত্রধর তার শাখা থেকে ব্যবসার জন্য ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন, যার মাসিক কিস্তি ৩৮ হাজার টাকা। কিন্তু কিস্তি আদায় করতে গিয়ে তাকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা বাড়ি কোথাও পাওয়া যায়নি। সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিখোঁজ এ রকম নয়। বাস্তবতা হচ্ছে অজ্ঞাত কারণে বা সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই তারা আত্মগোপন করেছেন। শোনা যাচ্ছে তারা বিভিন্ন এনজিও থেকে একাধিকবার ঋণ করার কারণে আত্মগোপনে চলে গেছেন। মনে হয় তারা ফিরে আসবেন। উদ্ধারে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

 

 

 

সর্বশেষ খবর