শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

ফের করোনার ঢেউ

আরও পাঁচজনের মৃত্যু, শনাক্ত ৪৯১

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফের করোনার ঢেউ

আগস্টের শেষ দিকে দেশে শুরু হওয়া করোনা মহামারির পঞ্চম ঢেউয়ে মৃত্যু বাড়ছে। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত সাত দিনেই ১৭ জনের মৃত্যুর খবর এলো। এ ছাড়া সংক্রমণের উচ্চ হার (১০ শতাংশের বেশি) বজায় রয়েছে টানা ২০ দিন। ৮০ শতাংশের বেশি নমুনা পরীক্ষা ঢাকা বিভাগে হলেও গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ শনাক্তের হার ছিল সিলেট বিভাগে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় শনাক্তের হার পরপর দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের বেশি হলে পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়েছে বলে ধরা হবে। আর দেশে ৩১ আগস্ট থেকে টানা ৩৮ দিন ৫ শতাংশের ওপরে রয়েছে শনাক্তের হার। ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে রয়েছে ১০ শতাংশের ওপরে, যাকে সংক্রমণের উচ্চমাত্রা বলা হয়। গত ২৭ জুলাইয়ের ৫৪ দিন পর ২০ সেপ্টেম্বর ফের এক দিনে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর আসে। এরপর মাত্র দুই দিন মৃত্যুহীন ছিল দেশ। ২৬ সেপ্টেম্বর এক দিনে ছয়জনের ও ১ অক্টোবর পাঁচজনের মৃত্যুর খবর আসে। সাত দিনের মাথায় আবারও ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনের মৃত্যু হলো।

এদিকে দেশে দেশে করোনাভাইরাসের পঞ্চম ঢেউ চললেও নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় রোগী শনাক্ত হচ্ছে কম। গত জুন-জুলাইয়ে চতুর্থ ঢেউয়ের সময় কোনো কোনো দিন ১৩ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা হলেও বর্তমানে দৈনিক নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে ৫ হাজারের কম। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৪ হাজার ৯১২ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ৪৯১ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়ে। শনাক্তের হার ১০ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে শনাক্তের হার কিছুটা কমলেও নমুনা পরীক্ষা বেশি হওয়ায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ১০.৭৬ শতাংশ। রোগী শনাক্ত হয় ৪১০ জন।

৮০ ভাগের বেশি নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে শুধু ঢাকা বিভাগে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট নমুনা পরীক্ষার ৮৩.৭৩ ভাগই হয়েছে ঢাকায়। অন্যদিকে নমুনা পরীক্ষাই হয়নি ১৭টি জেলায়। জেলাগুলো হচ্ছে- মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, বান্দরবান, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বাগেরহাট, যশোর, নড়াইল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও হবিগঞ্জ। মাত্র একটি করে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া জেলায়। পরীক্ষা না হওয়ায় এসব স্থানে করোনা পরিস্থিতি জানা যাচ্ছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগভিত্তিক নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ছিল যথাক্রমে সিলেটে ২০.২৩ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৫ শতাংশ, ময়মনসিংহে ১৪.৮৬ শতাংশ, খুলনায় ১১.৬৭ শতাংশ, ঢাকায় ৯.৬০ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮.৫৫ শতাংশ, বরিশালে ৮ শতাংশ ও রংপুরে ৬.৪৫ শতাংশ।

গত এক দিনে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭০১ জন করোনা রোগী। এই সময়ে মৃত পাঁচজনের মধ্যে একজন ছিলেন পুরুষ ও চারজন নারী। এর মধ্যে ষাটোর্ধ্ব ছিলেন দুজন। বাকিদের বয়স ছিল ২১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। মৃত সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহে একজন করে এবং জামালপুরে দুজন মারা গেছেন। মহামারির শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ২০ লাখ ২৯ হাজার ১৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৯ লাখ ৬৮ হাজার ৬৫৪ জন। মারা গেছেন ২৯ হাজার ৩৮০ জন।

গত জুনের মাঝামাঝি দেশে শুরু হয় করোনার চতুর্থ ঢেউ। জুলাইয়ের আগেই শনাক্তের হার ছাড়িয়ে যায় ১৫ শতাংশ। মধ্য জুলাই থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করে। তবে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নামে ১১ আগস্ট। ২২ আগস্ট শনাক্তের হার নেমে আসে ৩.১৫ শতাংশে। পরদিন থেকে ফের বাড়তে শুরু করে। ২৫ আগস্ট ৪ শতাংশ ও ৩১ আগস্ট ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। মাত্র ২০ দিন ছিল ৫ শতাংশের নিচে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানদন্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে রোগী শনাক্তের হার টানা দুই সপ্তাহের বেশি ৫ শতাংশের নিচে থাকলে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। অর্থাৎ চতুর্থ ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার এক মাসের মধ্যেই শুরু হয় পঞ্চম ঢেউ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর