শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

তিন সমস্যায় নাকাল সিলেট সিটি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

তিন সমস্যায় নাকাল সিলেট সিটি

ভারী বর্ষণ হলে এভাবেই তলিয়ে যায় সিলেটের উপশহর আবাসিক এলাকার সড়ক -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কয়েক মিনিটের ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় অসহনীয় যানজট, উন্নয়নের নামে বছরজুড়ে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি। এই তিন সমস্যায় সিলেট নগরবাসীকে নাকাল হতে হলেও দুর্ভোগ লাঘবে নেই নগরকর্তাদের মাথাব্যথা। উন্নয়নের নামে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও সমস্যা দূর হওয়ার পরিবর্তে উল্টো বাড়ছে ভোগান্তি। এ জন্য সিটি করপোরেশনের অপরিকল্পিত উন্নয়নকেই দায়ী করছেন বিশিষ্টজনেরা। আর ভোগান্তি লাঘবে একেক সময় একেক ধরনের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা।

আকাশে মেঘ দেখলেই এখন শিউরে ওঠেন সিলেট নগরবাসী। এই বুঝি নামল ঝুমবৃষ্টি। আর কয়েক মিনিটের ভারী বর্ষণ মানেই তো বাসা-বাড়ি, দোকানপাট, রাস্তাঘাটে হাঁটুপানি। অথচ ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে ছড়া-খাল উদ্ধার ও সংস্কার, ড্রেনেজ নির্মাণসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। কিন্তু হাজার কোটি টাকা ব্যয়েও জলাবদ্ধতার অভিশাপমুক্ত হতে পারেননি নগরবাসী। উল্টো বৃষ্টি হলেই পানিতে ভাসতে হচ্ছে তাদের। এ জন্য জলাবদ্ধতা নিরসনে অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নকে দায়ী করছেন সচেতন মহল। জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে নগর কর্তৃপক্ষও একেক সময় একেক কথা বলছেন। মে ও জুলাই  মাসে সিলেট নগরীতে ভয়াবহ বন্যা ও জলাবদ্ধতা দেখা দিলে ওই সময় সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এর কারণ হিসেবে সুরমা নদীর নাব্য কমে যাওয়াকে দায়ী করেছিলেন। সুরমা নদীর নাব্য কমে যাওয়ায় নগরীর ছড়া-খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু সুরমা নদীর পানি নামার পরও বৃষ্টি হলে নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তখন বোল পাল্টান সিটি করপোরেশনের মেয়র ও প্রকৌশলীরা। তখন বিভিন্ন স্থানে ড্রেনের নির্মাণ কাজ ও নির্মাণাধীন ড্রেনে ঠিকাদাররা নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখাকে দায়ী করেন তারা। একপর্যায়ে তারা জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অসময়ে বৃষ্টিপাত ও ছড়া-খালে নাগরিকদের ময়লা-আবর্জনা ফেলাকেই চিহ্নিত করেন। এ নিয়ে নগর ভবন কর্তৃপক্ষকে ব্যাপক সমালোচনায়ও পড়তে হয়। এদিকে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সিলেট নগরীর যানজট। বেশ কয়েক বছর আগেই নগরী থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে ইজিবাইক। ব্যাটারিচালিত রিকশাও নগরীর সড়কে নিষিদ্ধ। সড়কের ওপর চাপ কমাতে কার্টপয়েন্ট থেকে চৌহাট্টা ও বারুদখানা থেকে জল্লারপাড় ব্যস্ততম এসব সড়কে প্যাডেলচালিত রিকশাও তুলে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৬ ফুট করে রাস্তাও প্রশস্ত করা হয়েছে। কিন্তু এর পরও কমেনি যানজট। উল্টো দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে যানজট। যানজট বৃদ্ধির জন্যও নগরবাসী অপরিকল্পিত উন্নয়নকে দায়ী করছেন। অপরদিকে উন্নয়ন কাজের নামে সারা বছর নগরীর রাস্তাঘাটে চলে খোঁড়াখুঁড়ি। একটি কাজ শুরু হলে সেটি ফেলে রাখা হয় বছরের পর বছর। এতে একদিকে যেমনি যান ও জন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, তেমনি ধুলোবালির কারণে মানুষ নানা রকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শুষ্ক মৌসুমে পুরো নগরীর পরিবেশ ধুলোর রাজ্যে পরিণত হয়। এ নিয়ে নাগরিক সমাজ বিভিন্ন সময় প্রতিবাদী হলেও নগর ভবন কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

সর্বশেষ খবর