বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অপহৃত নাকি টোপ দিয়ে নিয়ে হত্যা!

বুয়েট ছাত্র ফারদিনের খুনিরা শনাক্ত দাবি র‌্যাবের

সাখাওয়াত কাওসার

অপহৃত নাকি টোপ দিয়ে নিয়ে হত্যা!

অনুমাননির্ভর তদন্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশের হত্যাকান্ড। খুনিদের শনাক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও ঠিক কী কারণে তাকে খুন করা হয়েছে সে সম্পর্কে এখনো জানতে পারেননি তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সরাসরি কিছু না বললেও এলিট ফোর্স র‌্যাব বলছে, খুনি শনাক্ত হলেও হত্যার মোটিভ এখনো পরিষ্কার হয়নি।

মামলার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলছেন, ফারদিন চনপাড়ায় কেন গিয়েছিলেন কিংবা কেউ কি তাকে আসলেই অপহরণ করেছিল- এমন প্রশ্নের উত্তর ও সিসিটিভি ফুটেজে ব্যস্ত সময় পার করছেন উভয় সংস্থার সদস্যরা। বুয়েটের এই মেধাবী ছাত্রের এমন পরিণতি তারাও মানতে পারছেন না।

বুয়েটশিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ ৫ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ওই দিনই রাজধানীর রামপুরা থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন। নিখোঁজের দুই দিন পর ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের লাশ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। এ ঘটনায় ফারদিনের বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে তার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকের পর গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে আদালত তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে দেন।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত সিরিয়াস। চনপাড়ার আশপাশেই ফারদিনকে খুন করা হয়েছে। তবে তিনি কারও সঙ্গে গিয়েছিলেন, নাকি তাকে অপহরণ করা হয়েছে তা নিশ্চিত নয়। রায়হানের বিষয়ে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। তবে তাকে গ্রেফতার করার পরই হয়তো তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।’ তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, ডেমরা মিরপাড়া মোড়ের ‘ডেমরা বিরিয়ানি হাউস’-এর সামনে থেকে ফারদিনকে রিসিভ করে নিয়ে যান রায়হান। চনপাড়ায় রায়হানের হেফাজতেই ছিলেন ফারদিন এমন অনেক তথ্যই পেয়েছেন তারা। তবে কে বা কারা ডেমরা বিরিয়ানি হাউসের সামনে রায়হানকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন বা ফারদিনের সঙ্গে আরও কেউ গিয়েছিলেন কি না বা তাকে কেউ অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল কি না এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো খুঁজছেন তারা। তবে ফারদিন যে চনপাড়ার আশপাশেই খুন হয়েছেন তা নিশ্চিত হয়েছেন তারা। ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। তবে বলার মতো এখনো কোনো তথ্য নেই।’ জানা গেছে, চনপাড়ার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী রায়হান। রায়হান তার স্ত্রীর বড় ভাই শাওনের হয়েই মূলত কাজ করেন। তবে রায়হানের আলাদা গ্যাং রয়েছে। চনপাড়ার ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নিয়ন্ত্রণ এই গ্যাংয়ের। চারটি পুলিশ অ্যাসল্ট ও মাদক মামলা নিয়ে মোট ১০টি মামলা আছে রায়হানের বিরুদ্ধে। তবে ফিটিং মাস্টার হিসেবে রায়হানের খ্যাতি রয়েছে চনপাড়ায়। রায়হান গ্যাংয়ের সদস্যরা হলেন কালা রায়হান, সুমন, সুজন, সাব্বির, মামুন, নয়ন, সায়েম, জালাল, বিকাশ, চোর সায়েম, মো. আলী, হিনগুল ফরাদ, ডাব মামুন, মাসুদ ও ইয়াসিন। এদিকে শুরুর দিকে খুনের সঙ্গে মাদকের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়ে ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বরাবরই দাবি করে আসছেন, ফারদিন মাদকের সঙ্গে কখনোই সম্পৃক্ত ছিলেন না। তিনি খুবই মেধাবী ছিলেন।

সর্বশেষ খবর