রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ত্যাগীদের মূল্যায়নের পরামর্শ আওয়ামী লীগ উপদেষ্টাদের

রফিকুল ইসলাম রনি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের পুরনো ও ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক সদস্য। এ ক্ষেত্রে তারা তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা নতুন দলে আসা ব্যক্তিদের সামনের সারির নেতা না বানাতে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে পরামর্শ দেন।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিরতিহীনভাবে বেলা ২টায়    শেষ হয়। এতে উপস্থিত অধিকাংশ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অনেক সময় নিয়ে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার বক্তব্য শোনেন। মঞ্চে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপদেষ্টারা বলেন, বাংলাদেশ স্বাবলম্বী হওয়ায় অনেক দেশ সেটাকে ভালো চোখে দেখছে না। যে কারণে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার কথাও বলেন তারা। অপপ্রচারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী যুক্তি তুলে ধরে প্রচারণা চালাতেও পরামর্শ দেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। বৈঠকে সূত্র জানায়, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র এবং  সমন্বয়ক আমির হেসেন আমু সভায় বলেন, আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। এর ব্যত্যয় ঘটবে না। কেউ যদি সংবিধানের বিপরীতে গিয়ে হত্যা, খুন ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তবে তাতে আইনিভাবে ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, দেশ ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। শুধু দেশিই নয়, বিদেশি ষড়যন্ত্রও শুরু হয়েছে। আমেরিকা আমাদের স্বাধীনতা চায়নি। স্বাধীনতা- পরবর্তী সময়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে বটমলেস বাক্সেট বলেছিলেন। এখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সে কারণে অনেক চক্রান্ত চলছে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল খালেক বলেন, তৃণমূলের মতামত নিয়ে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা দরকার। সে ক্ষেত্রে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে হবে। ভালো প্রার্থী মনোনয়ন দিলে দল ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। আর দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে আওয়ামী লীগ নিশ্চিত জয় পাবে। আবদুল খালেক বলেন, অনেক সময় দেখা যায় দলে এসেই মনোনয়ন পায়, সামনের সারির নেতা হয়ে যায়। এটা কেন হবে? এতে পুরনোরা হতাশ হয়। দলে এসে প্রথমে পেছনের সারিতে কাজ করবে। ধীরে ধীরে সামনে আসবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা আরও জোরদার করার পরামর্শ দিয়ে আবদুল খালেক বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে দিয়েছেন, তাঁকেই খুন করেছে ষড়যন্ত্রকারীরা। প্রধানমন্ত্রী দেশের অনেক উন্নয়ন করেছেন। এতে অনেকেই ক্ষুব্ধ। নানা অপপ্রচার হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সময়েও এ ধরনের অপপ্রচার দেখা গেছে।

দলের আরেক উপদেষ্টা মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, বিএনপি এখন আন্দোলন করছে। তারা নানান ধরনের দাবি করছেন। এ দাবি তারা করতেই পারেন। তবে সংবিধান মেনে তাদের চলতে হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করলে কোনো ধরনের বাধা দেওয়া ঠিক হবে না। তবে অধিকারের নামে যদি ২০১৪ সালের মতো জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন করে, মানুষ হত্যা করে তাহলে কোনো ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না।

জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি যত কথাই বলুক, শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে আসবে। সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির বলেন, অনেক সময় দেখা যায় বিদেশিদের সব কথার জবাব শুধু প্রধানমন্ত্রী দিচ্ছেন। সব কথার জবাব শুধু প্রধানমন্ত্রীকে কেন দিতে হয়। বিদেশিরা যখন যে বিষয়ে প্রশ্ন তোলে তখন তা সংশ্লিষ্টদের জবাব দিতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ইস্যু হলে ব্যবসায়ীরা এর জবাব দেবেন। আরেক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, এখন গুজব রটানো হচ্ছে, ব্যাংকে রিজার্ভ নেই। বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। এই গুজবের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সঠিক তথ্য তুলে ধরে জবাব দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর