বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার - মাহবুব-উল আলম হানিফ

রাষ্ট্রের আগে বিএনপিকে মেরামত করতে হবে

রফিকুল ইসলাম রনি

রাষ্ট্রের আগে বিএনপিকে মেরামত করতে হবে

বিএনপির ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ শীর্ষক ২৭ দফা ঘোষণা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, তাদের ২৭ দফায় দেশ ও জনগণের জন্য কিছু নেই। তারা তাদের দন্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতার মাফ চায়। যে দলটির শীর্ষ নেতারা সন্ত্রাসী ও দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত, দন্ডপ্রাপ্ত- তারা কীভাবে রাষ্ট্র মেরামত করবে? রাষ্ট্র মেরামতের আগে বিএনপিকে মেরামত করতে হবে।

গতকাল দুপুরে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি সমসাময়িক রাজনীতি, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাক্ষাৎকারে কথা বলেন। মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির ২৭ দফার মধ্যে জনগণের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। তাদের মূল দফা হচ্ছে দন্ডিত শীর্ষ নেতাদের সাজা মওকুফ করা। আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিটি সম্মেলনেই কিছু নেতা বাদ পড়েন, কিছু নেতার সংযোজন হয়। প্রবীণের অভিজ্ঞতা ও নবীনের শক্তি-উদ্যমের সংমিশ্রণে সংগঠন ঢেলে সাজানো হয়। এটা সবসময় হয়ে আসছে, এবারও তা-ই হবে। কারণ এই দলের সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মুহূর্তে দেশের সবচেয় দক্ষ, বিচক্ষণ ও প্রাজ্ঞ নেত্রী। এখন যারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী প্রায় সবাই তাঁর হাতে গড়া। ফলে তিনিই ভালো জানেন, তাঁর কোন কর্মী কতটুকু কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন। সেভাবেই তিনি তাঁর দলকে ঢেলে সাজাবেন। তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলন একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রতি তিন বছর পরপর আমাদের জাতীয় সম্মেলন করতে হয়। এর মধ্য দিয়ে দলকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করার চেষ্টা করা হয়। হানিফ বলেন, একটা কমিটির মধ্যে সব সদস্য সমানভাবে কাজ করতে পারেন না। যারা একটু নিষ্ক্রিয় বা দলীয় কর্মকান্ডে কম সক্রিয়- সম্মেলনের মাধ্যমে সে ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন হয়। বিএনপির রাষ্ট্র মেরামতের দাবি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি যে দাবি করছে তাতে দেশের সব দন্ডপ্রাপ্ত অপরাধীর পরিবার ও তাদের স্বজনরাও এমন দাবি করতে পারে। তাহলে তো দেশের আইন-আদালত সব বন্ধ করে দিতে হবে। কারাগার উঠিয়ে দিতে হবে। কারণ বিএনপির শীর্ষ দুর্নীতিবাজ দন্ডিত নেতারাও যেমন একজনের স্বজন, তেমনি অন্য অপরাধে যারা দন্ডিত তারাও কারও না কারও স্বজন। কাজেই প্রকৃতপক্ষে এই ২৭ দফার মধ্যে দেশ ও জনগণের স্বার্থের কোনো কথা নেই। হানিফ প্রশ্ন রেখে বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার কারা করবে? যারা একাধিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত, দন্ডপ্রাপ্ত তারা করবে রাষ্ট্র সংস্কার? বিএনপির উচিত রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলার আগে নিজের দলকে সংস্কার করা। তাদের নেতা তারেক রহমান। তিনি কোনো রাজনীতিবিদ নন। তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হিসেবে ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত হাওয়া ভবন বানিয়ে সমান্তরাল একটা সরকার গঠন করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে প্রভাবিত করে কমিশন বাণিজ্য করেছেন। সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করেছেন। দেশকে জঙ্গিবাদের চারণভূমি বানিয়েছিলেন। তাকে সন্ত্রাসী নেতা বলা যেতে পারে। রাজনীতিবিদ বা রাজনৈতিক নেতা বলার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, যে দলের নেতা (তারেক রহমান) সন্ত্রাসী হিসেবে এবং অর্থ পাচারের দায়ে দেশে ও বিদেশে আদালতে দন্ডপ্রাপ্ত, সে কি না রাষ্ট্র সংস্কার করবে! এর চেয়ে হাস্যকর ও তামাশার কথা আর কিছু হতে পারে না। তাই আমরা মনে করি, বিএনপির আগে নিজের দল সংস্কার করা উচিত। যাদের শীর্ষ নেতা একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হয়ে দন্ডপ্রাপ্ত, তাদের বাদ দিয়ে ক্লিন ইমেজের লোকদের নিয়ে আসার পর যদি জনগণের কাছে এই কথা বলে তখন সেটা জনগণের কাছে কিছুটা হলেও গ্রহণযোগ্য হতে পারে। বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের এই যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বলেন, যে-কোনো গণতান্ত্রিক দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পারে। বিএনপি সবসময়ই মিথ্যাচারের রাজনীতি করে। ১০ ডিসেম্বর নিয়ে তারা শুধু দেশের মানুষকেই নয়, দলের নেতা-কর্মীদেরও ধোঁকা দিয়েছে। তারা নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে বলেছে, ১০ তারিখের পর নাকি খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে। এ ধরনের মিথ্যাচার করাই তাদের অভ্যাস। তারা একবার বলছে নির্বাচনে যাবে না। আবার প্রস্তুতিও নিচ্ছে। তবে আমরাও চাই তারা সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের পথ পরিহার করে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরুক। নির্বাচনে আসুক। বিএনপি ও জামায়াতের অভিন্ন কর্মসূচি প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, জামায়াতের আধ্যাত্মিক নেতা মাওলানা মওদুদি। আর বিএনপির সৃষ্টি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মাধ্যমে। এটা সত্য। অস্বীকার করার কিছু নেই। তাদের আদর্শও এক। দুই দলই পাকিস্তানের আদর্শ বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সুতরাং তাদের কর্মসূচিও এক হবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন স্বাধীনতাবিরোধীদের আর দেখতে চায় না। এজন্য বিএনপি জামায়াতকে নিয়ে কৌশলে এগোচ্ছে। বিএনপি যে মিথ্যাচার ও প্রতারণার রাজনীতি করে এটাও তার একটি উদাহরণ। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিকভাবে কোনো আলোচনা বা সমঝোতার সুযোগ আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কার সঙ্গে কে সমঝোতা করবে? প্রধানমন্ত্রী খুব স্পষ্টভাবেই বলেছেন, যারা একাত্তরের গণহত্যা এবং পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত তাদের সঙ্গে কীসের সমঝোতা। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আলোচনা হতে পারে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এজন্য নির্বাচন কমিশন আছে। নির্বাচনের দায়দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। সরকারের সঙ্গে যদি কোনো রাজনৈতিক দল কথা বলতে চায়, সেটা সরকার দেখবে। তবে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কারও সঙ্গে বসবে এমন কোনো তথ্য এ মুহূর্তে আমার জানা নেই।

সর্বশেষ খবর