শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

টেনেহিঁচড়ে নেওয়া সেই গাড়িচালক ঢাবি শিক্ষকের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর শাহবাগে রুবিনা আক্তার (৪৫) নামে এক নারীকে প্রাইভেট কারে চাপা দেওয়ার পর টেনেহিঁচড়ে নেওয়ায় মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক শিক্ষক আজহার জাফর শাহও (৫৬) মারা গেছেন। গতকাল বিকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কারারক্ষীরা তাকে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গত ২ ডিসেম্বরের সেই ঘটনার সময় ঢাবির এই শিক্ষক গণপিটুনিতে আহত হন। এক মাসের বেশি সময় অসুস্থ থাকার পর ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক আজহার মারা গেলেন।

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জাফর শাহকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কারারক্ষী মো. রফিকুল বলেন, কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে জাফর শাহ নামে ওই হাজতি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢামেকে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢামেকের পুলিশ ক্যাম্প ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে মৃতদেহ রাখা হয়েছে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে।

ঘটনার দিন (২ ডিসেম্বর) প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকালে ঢাবির চারুকলার সামনে এক নারী প্রাইভেট কারে চাপা পড়েন। নারীর ওড়না গাড়ির বাম্পারের সঙ্গে পেঁচিয়ে যায়। চালক গাড়িটি না থামিয়ে চালাতে থাকেন। ওই নারীকে টেনেহিঁচড়ে রাজু ভাস্কর্য, ভিসি চত্বর হয়ে নীলক্ষেত পর্যন্ত প্রায় পৌনে ১ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যান ঢাবির ওই শিক্ষক। এ সময় আশপাশের ক্ষুব্ধ জনতা তাকে পেছন থেকে ধাওয়া দেয়। এতে গাড়িটির গতি আরও বাড়িয়ে দেন চালক। নীলক্ষেতে বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে ধরে গণপিটুনি দেয়। গাড়িটিও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় রুবিনাকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

এদিকে এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করেন রুবিনার ভাই জাকির হোসেন মিলন। ওই মামলার এজহারভুক্ত একমাত্র আসামি ছিলেন ঢাবির ওই শিক্ষক। তবে গণপিটুনিতে আহত জাফর শাহকে প্রায় এক মাস ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ১ জানুয়ারি মামলার আসামি জাফরকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জাফর। উল্লেখ্য, জাফর শাহকে নৈতিক স্খলনজনিত কারণে ২০১৮ সালে পদাবনতিসহ চাকরিচ্যুত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তিনি ক্লাস-পরীক্ষাসহ বিভিন্ন একাডেমিক কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় ছিলেন বলে জানা যায়। জাফর গুলশানে নিজ ফ্ল্যাটে থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। তার বাবার নাম মৃত মাইন উদ্দিন জাহাঙ্গীর শাহ।

সর্বশেষ খবর