মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাখির কলতানে মুখর পাহাড়

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

পাখির কলতানে মুখর পাহাড়

পাখির কলতানে মুখর পাহাড়। কিচিরমিচির ছন্দের তালে ঝাঁক বেঁধে চলে সারা দিন ওড়াওড়ি। হ্রদ-পাহাড়ে পাখিদের এমন খুনসুটি দেখে মুগ্ধ স্থানীয়রা। পার্বত্যাঞ্চলে নানা প্রজাতির রং-বেরঙের পাখি প্রায় প্রতিদিনই আসছে শীতপ্রধান দেশ থেকে। সবুজ পাহাড়, বন-জঙ্গল আর বাঁশ ঝাড়ের অস্থায়ী নীড়ে ঠাঁই হয়েছে এসব পাখির।

ভোরের আবছা কুয়াশার বুক চিরে কাপ্তাই হ্রদের ডুবোচরে বসে দেশি-বিদেশি পাখির মিলনমেলা। হ্রদের স্বচ্ছ জল আর হিমশীতল হাওয়ায় অতিথি পাখির আনন্দে শামিল হয় স্থানীয় পাখিরাও। কখনো হ্রদের বুকে ডুব সাঁতার, কখনো ঝাঁক বেঁধে আকাশের নীলে ওড়াওড়ির দৃশ্য দেখতে রাঙামাটিতে ভিড় জমছে পর্যটকদের। সন্ধ্যা নামার মুখে পাহাড়ের বুকজুড়ে যখন ছড়িয়ে পড়ে গোধূলির সোনালি রং, তখনই ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় পাখিগুলোর। এরা ঝাঁকে ঝাঁকে ফিরে যায় গহিন অরণ্যের অস্থায়ী নীড়ে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শীতের প্রকোপ যত বাড়ে, অতিথি পাখির আগমনও তত বাড়ে। বর্তমানে রাঙামাটিতে দল বেঁধে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি। রাঙামাটি শহরের ডিসি বাংলোর পেছনে হ্রদের ওপর গাছগুলোতে শত শত অতিথি পাখির কলতানে মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি একাকার হয়ে মিশে গেছে। প্রায় প্রতিদিন ওরা আসছে প্রকৃতির টানে দূর-দূরান্ত থেকে। সুদূর সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশ থেকে পাহাড়ে এসেছে ফ্লাইফেচার, জলকুট, পর্চাড, জলপিপি, পাতারি, গার্নিগি, পাস্তামুখী, নর্দানপিন্টেলসহ নানা প্রজাতির পাখি। অতিথি পাখির সঙ্গে যোগ দিয়েছে দেশি পাখি সরালি, ডাহুক, পানকৌরি, বক, বালিহাঁস। জানা গেছে, শুধু রাঙামাটি শহর এলাকা নয়। অতিথি পাখির দেখা মিলছে জেলার সুবলং, লংগদু, কাট্টলী, মাইনিমুখ, সাজেক, বাঘাইছড়ি, হরিণা, বিলাইছড়ি ও বরকলে। এসব পাখিতে কানায় কানায় ভরে গেছে নদীর তীর ও জলে ভাসা চরগুলো। তাছ পাহাড়ি এলাকার ডুবচর ও নদীর পাড়ে যেসব পাখি বেশি দেখা যাচ্ছে- এর মধ্যে রয়েছে পাতিহাঁস, ডাহোক, কালাম, বক, ছোট সরালি, বড় সরালি, টিকি হাঁস, মাথা মোটা টিটি, চোখাচোখি, গাংচিল, গাং কবুতর, চ্যাগা ও জল মোরগ, বইধরসহ বিভিন্ন নাম না জানা পাখি।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান জানান, প্রতিবছর উত্তরের শীতপ্রধান সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া ও নেপাল থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখি এদেশে আসে। এ সময় সাইবেরিয়া ও হিমালয়ের উত্তরে শুরু হয় প্রচণ্ড শীত ও তুষারপাত। তাই ওখানে পাখিরা থাকতে পারে না। নিজেদের বাঁচাতে এরা ডানায় ভর করে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশসহ সংলগ্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে। দেশের হাতেগোনা যে কয়েকটি এলাকায় এরা ক্ষণস্থায়ী আবাস গড়ে, তার মধ্যে অন্যতম পার্বত্যাঞ্চল। তিনি আরও বলেন, মূলত অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের প্রথম দিকেই রাঙামাটি ডিসি বাংলোর গাছগুলোতে তাদের আসতে দেখা যায়। আবার মার্চের শেষদিকে ফিরে যায় আপন ঠিকানায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর