শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন

ধস্তাধস্তি-হাতাহাতি শেষ দিনেও

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (সুপ্রিম কোর্ট বার) নির্বাচনের প্রথম দিনে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর শেষ দিনেও ধস্তাধস্তি, হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে। গতকাল বিকাল ৫টায় দুই দিনব্যাপী ভোট গ্রহণ শেষ হয়। সমিতির ৮ হাজার ৬০২ জন ভোটারের মধ্যে দুই দিনে ভোট দিয়েছেন ৪ হাজার ১৩৪ জন। আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীরা ভোট দিলেও দুই দিনে বিএনপির উল্লেখযোগ্য কেউ ভোট দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া যায়নি। রাত ৮টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভোট গণনার প্রস্তুতি চলছিল।

এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। একজন আইনজীবীকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এদিকে সাংবাদিকদের ওপর আগের দিনের হামলার ঘটনায় গতকাল দুঃখ প্রকাশ করেছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। দ্বিতীয় ও শেষ দিনের নির্বাচনে গতকাল ভোট শুরু হয় সকাল ১০টার পর। এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীরা জড়ো হয়ে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেন। বেলা ১২টার দিকে একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে দুই পক্ষে তুমুল উত্তেজনা ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতি শুরু হয়। এরপর দিনের বিভিন্ন সময়ে দুই পক্ষে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

এর আগে সকালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আট বিচারপতির আপিল বিভাগে উপস্থিত হয়ে কথা বলেন বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী। এরপর বেলা ১১টায় আবার প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে খাস কামরায় গিয়ে নির্বাচন ও হামলা-মামলার বিষয়ে কথা বলেন বিএনপির আইনজীবী নেতারা। এরপর প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বলেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি একটা প্রাইভেট বডি। তাই এটা আইনজীবী সমিতির বিষয়। এখানে প্রধান বিচারপতির করণীয় কিছু নেই। আপনারা বারের সিনিয়র আইনজীবীদের নিয়ে বসে আলাপ করে সমস্যার সমাধান করেন। সবাই মিলে পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার চেষ্টা করেন।’

এর আগে বুধবার প্রথম দিনের ভোট চলাকালে সাদা (সরকার সমর্থক) ও নীল (বিএনপি সমর্থক) দলের মধ্যে দিনভর দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি, হামলা, ভাঙচুর ও পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে।

আইনজীবী রিমান্ডে : সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে মারধর, ভাঙচুর ও ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় সালাউদ্দিন রিগ্যান নামে এক আইনজীবীর এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আহমেদের আদালত। গতকাল আদালতে রিগ্যানকে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন। অন্যদিকে আসামি পক্ষ রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করে। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

নির্বাচন স্থগিত চেয়ে রিট : সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাই কোর্টে রিট দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও নির্বাচনের সভাপতি প্রার্থী ইউনুছ আলী আকন্দ। রিট আবেদনে নির্বাচন স্থগিতের পাশাপাশি রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দকে বারের সভাপতি ঘোষণার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

ডিএমপি কমিশনারের দুঃখ প্রকাশ : সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দুঃখ প্রকাশ করেছেন। টেলিফোনে ডিএমপি কমিশনার ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি আশুতোষ সরকারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়টি দেখা হবে বলে জানান। এর আগে সকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম কার্যালয়ে আসেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশিদ। তিনি ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে ডিবি প্রধান বলেন, গতকালের ঘটনায় তারা দুঃখিত। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা পুরোপুরি অনিচ্ছাকৃত। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে- সেজন্য পুলিশ সচেষ্ট থাকবে বলে জানান হারুন অর রশিদ।

সর্বশেষ খবর