সোমবার, ১৫ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

জাল মুদ্রায় যাবজ্জীবন

কোটি টাকা জরিমানা, আসছে নতুন আইন

আকতারুজ্জামান

জাল মুদ্রা কেনাবেচা, ব্যবহার, গ্রহণ বা অন্য কোনোভাবে তা আসল মুদ্রা হিসেবে লেনদেন করলে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হবে। একই সঙ্গে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত করা যাবে। এমন শাস্তির বিধান রেখেই জাল মুদ্রা প্রতিরোধ আইন ২০২৩ করছে সরকার। এই আইনের অধীনে অপরাধসমূহ আমলযোগ্য, অ-আপসযোগ্য ও অ-জামিনযোগ্য বলে গণ্য হবে। জাল মুদ্রা অথবা আসল মুদ্রা সম্পর্কিত কোনো গুজব ছড়ালে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা যাবে। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই আইনের খসড়া পর্যালোচনার জন্য আগামী ২২ মে সভা আহ্বান করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাহেদা পারভীন এতে সভাপতিত্ব করবেন বলে জানা গেছে।

তথ্যমতে- দেশে প্রচলিত মুদ্রার আদলে জাল মুদ্রা প্রস্তুত, কেনাবেচা, লেনদেন, পরিবহন, সরবরাহ ইত্যাদি কার্যক্রম প্রতিরোধ করতে এই আইন করছে সরকার। আইনের খসড়ায় গ্রেফতার করার ক্ষমতার ধারায় বলা হয়েছে, জাল মুদ্রা প্রস্তুত, মজুদ ও পরিবহনে সম্পৃক্ত কোনো সন্দেহজনক ব্যক্তিকে পাওয়া গেলে তাকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যাবে।

আইনের খসড়া থেকে দেখা গেছে- তল্লাশিকালে প্রাপ্ত সন্দেহজনক মুদ্রা, জাল মুদ্রা লেনদেন থেকে প্রাপ্ত প্রচলিত বৈধ স্থানীয় বা বৈদেশিক যা-ই হোক না কেন তা-ই জব্দ করা যাবে। কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীনে অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে পুলিশ বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধি নিকটস্থ থানা বা আদালতে অভিযোগ বা মামলা দায়ের করতে পারবেন। আইনে জাল মুদ্রা তৈরিতে ব্যবহৃত কাগজ, রাসায়নিক দ্রব্য, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি উৎপাদন, সংরক্ষণ, কেনাবেচা বা আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে।

আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, জাল মুদ্রা কেনাবেচা, ব্যবহার, গ্রহণ বা অন্য কোনোভাবে তা আসল মুদ্রা বলে ব্যবহার বা লেনদেন করা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। জানা সত্ত্বেও মুদ্রা জালকরণ কাজে ব্যবহৃত কোনো যন্ত্র, হাতিয়ার বা উৎপাদন সামগ্রী প্রস্তুত করা, কেনাবেচা, ব্যবহার, সরবরাহ, আমদানি-রপ্তানি অপরাধ বলে গণ্য হবে। জাল মুদ্রা বিদেশ থেকে দেশে বা দেশ থেকে বিদেশে সরবরাহ বা পাচার আইনে দন্ডনীয় হবে। জাল মুদ্রা তৈরি পদ্ধতি উদ্ভাবন বা তথ্য আদান-প্রদানও দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। উল্লিখিত যে কোনো অপরাধ করলে অভিযুক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন। একই সঙ্গে তিনি ১ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। এই অর্থ অনাদায়ে আরও পাঁচ বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বাতিল করা বিকৃত মুদ্রা বাজারজাত করলে অভিযুক্ত ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন। একই সঙ্গে তাকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে আইনে। এই অর্থ অনাদায়ে অতিরিক্ত আরও পাঁচ বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। জাল মুদ্রা জানা সত্ত্বেও তা আসল মুদ্রা বলে চালিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এসব জাল মুদ্রা দখলে রাখলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। এই অর্থ অনাদায়ে অতিরিক্ত আরও পাঁচ বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন অভিযুক্ত ব্যক্তি।

এ ছাড়া জাল মুদ্রা অথবা আসল মুদ্রা সম্পর্কিত যে কোনো গুজব ছড়ালে অভিযুক্ত ব্যক্তি ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে খসড়া আইনে।

জানা গেছে, উপ-পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন পুলিশ কর্মকর্তা বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা এই আইনের অধীনে রুজু করা মামলা বা অভিযোগ তদন্ত করতে পারবেন। ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে আদালতে অভিযোগনামা ও প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর