সোমবার, ২২ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
সরগরম সিটি নির্বাচনের মাঠ

আরিফবিহীন নির্বাচনে নতুন হিসাব

সিলেট

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

আরিফবিহীন নির্বাচনে নতুন হিসাব

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে শনিবার পর্যন্ত ছিল টানটান উত্তেজনা। সেই উত্তেজনার সবটুকু ছিল বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ঘিরে। কিন্তু শনিবার তিনি সমাবেশ করে নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছেন। ভোট কেন্দ্রে না যেতে আহ্বান জানিয়েছেন নগরবাসীকেও। আরিফের এ ঘোষণার পর ভোটারদের উত্তেজনায় ভাটার টান পড়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে বাকি মেয়রপ্রার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে নতুন হিসাব-নিকাশ। নগরবাসী মনে করছেন, আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানের পথ সুগম হয়েছে। অন্য প্রার্থীরাও ভোটের মাঠ থেকে আরিফের প্রস্থানকে নিজেদের জন্য ‘ইতিবাচক’ মনে করছেন। নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় নামার পর থেকে বক্তৃতা-বিবৃতিতে আরিফুল হক চৌধুরীকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। মুখে গুরুত্ব না দিলেও নগরবাসী মনে করছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর মেয়র হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিলেন আরিফ। দুই চৌধুরী প্রার্থী হলে নির্বাচন হবে জমজমাট- এমন আভাসও মিলছিল সাধারণ ভোটারদের কাছ থেকে। কিন্তু শনিবার রেজিস্টারি মাঠে জনসভা করে নির্বাচনী পরিবেশ না থাকা এবং ইভিএমে ভোট কারচুপির শঙ্কা প্রকাশ করে সরে দাঁড়ান আরিফ। আরিফুল হক চৌধুরীর এ ঘোষণার পর পটপরিবর্তন হতে থাকে সিসিক নির্বাচনের। এখন অনেকেই মনে করছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর মেয়র হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় কাঁটা দূর হয়েছে। ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মাহমুদুল হাসানের চেয়ে আনোয়ারুজ্জামান অনেক বেশি এগিয়ে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে তাদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলাও কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে করছেন তারা। আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আরিফুল হক চৌধুরী ১০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি আবারও প্রার্থী হন এটাই আমি চেয়েছিলাম। তাকে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আহ্বানও আমি জানিয়েছি। কিন্তু ভোটে গণমানুষের রায় তার পক্ষে যাবে না এটা নিশ্চিত হয়েই মাঠ ছেড়েছেন তিনি। কারণ মানুষ বুঝে গেছে তিনি গত ১০ বছর উন্নয়নের নামে সরকারে দেওয়া হাজার কোটি টাকা নষ্ট করেছেন।’ এদিকে, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সমর্থনে নগরীতে জোরেশোরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। শনিবার রাতে নগরীর দরগাগেটে একটি হোটেলের হলরুমে আওয়ামী লীগ নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোস্তাক আহমদের আহ্বানে সিলেট নগরীতে বসবাসরত জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার লোকজনদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নিজেও উপস্থিত ছিলেন। অ্যাডভোকেট মোস্তাক আয়োজিত ওই সভায় জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটের উপস্থিত জনসাধারণ আনোয়ারুজ্জামানের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করে নির্বাচনে তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় নিজেদের ভোটের পাল্লা ভারি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও সাধারণ নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা ঠিকই ভোট দিতে যাবেন। কাউন্সিলর প্রার্থীরাই কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন ভোটারদের, এমনটা মনে করছেন মেয়র প্রার্থীরা। আর ভোটার উপস্থিতি বাড়লে আওয়ামী লীগ অর্থাৎ সরকারবিরোধী ভোট পড়বে নৌকার বিপরীতে। নৌকাবিরোধী সে ভোটব্যাংক নিজেদের দখলে নিতে এখন পরিকল্পনা করতে শুরু করেছেন জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনসহ অন্য মেয়র প্রার্থীরা। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘সিলেট নগরবাসী আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র দেখেছেন। তারা কেউই নগরবাসীর আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেননি। তাই তারা এবার বিকল্প হিসেবে জাতীয় পার্টির মেয়র চাচ্ছেন। আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে তার সমর্থকদের ভোট জাতীয় পার্টির প্রতীক লাঙ্গলেই পড়বে। এতে লাঙ্গলের বিজয় আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আমি মনে করছি।’

সর্বশেষ খবর