বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
বাজেট ভাবনা

জনমুখী ব্যবসাবান্ধব বাজেট চাই

মো. জসিম উদ্দিন

শাহেদ আলী ইরশাদ

জনমুখী ব্যবসাবান্ধব বাজেট চাই

দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আগামী বাজেট ঘিরে জনগণের ব্যাপক প্রত্যাশা থাকবে। সামগ্রিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে জনমুখী ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণীত হবে বলে আমরা আশা করি। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। মো. জসিম উদ্দিন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা, দূরদর্শী ও বিচক্ষণ পরিকল্পনা এবং আন্তরিক প্রয়াস আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সুদৃঢ় করেছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করেছে। বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। সেই সঙ্গে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বর্তমানে জাতীয় অর্থনীতি একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ালেও করোনা-পরবর্তী বিরূপ পরিবেশ এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নের গতিধারা এগিয়ে নিতে হচ্ছে। এজন্য দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশকে আরও সুদৃঢ় ও জোরদার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আগামী বাজেট ঘিরে জনগণের ব্যাপক প্রত্যাশা থাকবে। সামগ্রিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে জনমুখী, ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণীত হবে বলে আমরা আশা করি। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় করতে ব্যবসায়িক খরচ (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) কমিয়ে এনে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সুষম বিনিয়োগসহায়ক মুদ্রা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, শিপিং খরচসহ সব ধরনের পরিবহন খরচ হ্রাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি বলে আমি মনে করি। মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিনিয়োগ, দেশি শিল্প ও সেবা এবং সিএমএসএমইকে শুল্ককরের যৌক্তিক প্রতিরক্ষণ; ক্ষেত্রবিশেষ অব্যাহতি বা বন্ড সুবিধা দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ভিত্তিতে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণসহ দেশজ উৎপাদন অব্যাহত রাখা; রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণ; নিত্যব্যবহার্য্য পণ্যমূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখা; করনীতি, করপদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণের মাধ্যমে কর নেট বা করজাল সম্প্রসারণ; স্বেচ্ছায় কর প্রতিপালন হার বৃদ্ধিপূর্বক রাজস্ব আদায় তথা কর জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি; আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করা; মানবসম্পদ উন্নয়ন, কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষা এবং শ্রমের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি; চলমান বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে দেশের বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীল খাত দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে শিল্প ও বিনিয়োগ বান্ধব বাজেট প্রণয়নে সরকার আন্তরিক চেষ্টা চালাবে বলে আমার প্রত্যাশা।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, পরিবর্তন ছাড়াই ব্যবহৃত তৈরি পণ্য সর্বোচ্চ স্তর ২০৩০-এর মধ্যে ২৫ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা; মূসক নিবন্ধিত দেশে উৎপাদিত যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ এবং মধ্যবর্তী কাঁচামালের শুল্কহার ৫% থেকে ৭%-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা; যন্ত্রপাতি, তালিকাভুক্ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, মৌলিক এবং দেশে উৎপাদিত হয় না এমন কাঁচামালের শুল্কহার ১% থেকে ৩%-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা দরকার। তিনি বলেন, মেড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন খাতের শিল্পকে বিভিন্ন শর্তে প্রদত্ত ট্যারিফ সুবিধা উক্ত খাতের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের স্বার্থে ও উক্ত শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে অব্যাহত রাখা। পণ্য এবং সেবা খাতে মূল্য সংযোজনভিত্তিক একক ১৫% হারে মূসক আরোপ করা হলে খাতনির্বিশেষে সব পণ্য এবং সেবা খাত বিভিন্ন এসআরওভিত্তিক অসম করহার এবং জটিলতা থেকে রেহাই পাবে এবং করব্যবস্থা সহজ ও সরল হবে। আয়কর আইনের কাঠামো ও মৌলিক বিষয়গুলো আবশ্যিকভাবে আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চা এবং দেশের বিনিয়োগ চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন আয়কর আইনের মাধ্যমে একটি যুগোপযোগী আয়কর পরিকাঠামো ও রূপরেখা নিশ্চিত করা দরকার।

জসিম উদ্দিন বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতির অনেক বিকাশ ঘটেছে। সেখানেও ট্যাক্স-ভ্যাট দেওয়ার মতো লোক আছে। তাদের করের আওতায় না এনে শুধু করহার বাড়িয়ে কর আদায় বাড়ানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। হয়রানিমুক্ত এনফোর্সমেন্টের জন্য এনবিআরের পলিসি উইং আলাদা করা দরকার। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, তেল, চিনিসহ যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় ও কৃষিপণ্য আমদানির বিকল্প নেই সেসব পণ্যের ওপর অগ্রিম আয়করসহ সব ধরনের ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহার করা উচিত। পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষিতে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর