সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

গাছ লাগিয়ে দৃষ্টান্ত এলাইছ মিয়ার

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার

গাছ লাগিয়ে দৃষ্টান্ত এলাইছ মিয়ার

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি। এর আয়তন ১৮.১১৫ হেক্টর। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হাওরে প্রায় ৮ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে হাকালুকির অবস্থান। বিশাল আকৃতির এই হাওরে কৃষক, জেলা ও পর্যটকসহ প্রতিনিয়ত নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু ছায়া নেওয়ার মতো কোনো জায়গা কিংবা গাছপালা ছিল না হাকালুকি  হাওরে। সরকারি উদ্যোগেও নির্মাণ করা হয়নি কোনো ঘর। তীব্র রোদে কিংবা ঝড়ে কৃষকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে ধান কাটার সময় গ্রীষ্মকালের রোদে কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়তেন। কিছু সময়ের জন্য ছায়াতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য কোনো জায়গা ছিল না বৃহত্তম এই হাওরে। এ বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে নিজ উদ্যোগে হাকালুকি হাওরের চালিয়া এলাকায় ২০১৩ সালে একটি করচ গাছ রোপণ করেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বাদে ভুকশিমইল গ্রামের মো. এলাইছ মিয়া। গাছ রোপণের পর থেকে এটিকে বাঁচানোর জন্য সকাল-বিকাল পরিচর্যা করেছেন তিনি। হাওর বছরের অর্ধেক সময় পানিতে থৈ থৈ থাকে। বৃক্ষপ্রেমী হাজী মো. এলাইছ মিয়ার নিবিড় তত্ত্বাবধানে এই গাছটি বড় হয়। মো. এলাইছ মিয়া পরবর্তীতে হাওরে আরও পাঁচটি করচ ও ইজল গাছ রোপণ করেছেন।

সরেজমিন দেখা যায়, শুকনা মৌসুমে প্রচ  গরমের সময় কৃষক ও পর্যটকরা গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। গাছটি কৃষকদের কাছে হাওরের ছাতা হিসেবে পরিচিত। এদিকে বর্ষা মৌসুমে হাওরে ঝড় এলে জেলেরা নৌকা নিয়ে গাছের পাশে আশ্রয় নেন। এ বিষয়ে কুলাউড়ার বাদে ভুকশিমইল গ্রামের কৃষক গিয়াস মিয়া, ইদই মিয়া ও জিতু মিয়া বলেন, ‘জমিতে কাজ করে আমরা এই গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিই। গাছের নিচে বসে শান্তিতে ভাত খেতে পারি। গাছটি ছাতার মতো কাজ করছে।’ টলি ড্রাইভার ফরিদ মিয়া বলেন, ঝড়-তুফান এলে কিংবা রোদে কাজ করার পর বিশ্রাম নেওয়ার মতো কোনো জায়গা ছিল না। এখন হাওরের কৃষকরা কাজ করে এখানে এসে আশ্রয় নেন। এ গাছটি আমাদের অনেক উপকারে আসছে। সরকারি উদ্যোগে এ রকম গাছ লাগানো প্রয়োজন। বৃক্ষ রোপণকারী বলেন, বাড়ি থেকে টলি দিয়ে গাছটি এখানে এনে রোপণ করেছি। দিন ও রাতে গাছে পানি দিয়েছি। যার কারণে গাছটি জীবিত হয়ে ডাল-পালা মেলে। প্রতিদিন শতশত কৃষক গাছের ছায়াতে বসছেন। এটাই আমার সফলতা। সরকারি উদ্যোগে এ রকম গাছ লাগানো প্রয়োজন। পরিবেশ অধিদফতর মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক মো. মাঈদুল ইসলাম বলেন, এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। সামাজিক ও মহৎ কাজে এভাবে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।

সর্বশেষ খবর