সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা
ঢাকায় কর্মশালা

সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাড়ছে বিস্ফোরণ ও আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (জামাকন) চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, শিক্ষাগ্রহণ ও সতর্ক না হওয়া এবং তদন্তের সুপারিশ পূর্ণ বাস্তবায়ন না করায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিটি অগ্নিকান্ডের পর পরই একাধিক সংস্থা তদন্ত কমিটি গঠন করে। শুরু হয় নানারকম আলোচনা। আগুনের সূত্রপাত, ক্ষয়ক্ষতির হিসাব ও বেশকিছু সুপারিশ সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পৌঁছায়। কিন্তু মাস ঘুরে বছর যায়, সে সুপারিশ আর বাস্তবায়ন হয় না। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘অগ্নিকান্ড ও বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনা : নাগরিকের মানবাধিকার প্রেক্ষিত’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত এ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা। সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার সঞ্চালনায় কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন, দুর্যোগব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান খান, জামাকন সদস্য কাওসার আহমেদ, জামাকন পরিচালক কাজী আরফান আশিক, জামাকন সচিব নারায়ণ চন্দ্র সরকার, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন, পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি রেবেকা সুলতানা, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা প্রমুখ। কর্মশালায় জামাকন চেয়ারম্যান বলেন, সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতায় একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মামলা হয়নি। আবার দু-একটি ক্ষেত্রে মামলা হলেও সাজার কোনো নজির নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ীদের চিহ্নিত করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অগ্নিনির্বাপণে শুধু ফায়ার সার্ভিসই নয়, পানি-গ্যাস-বিদ্যুতের সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন দফতরগুলোর সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে। এসব বিভাগ সমন্বিতভাবে অগ্নিকান্ড ও বিস্ফোরণ মোকাবিলায় একটি রূপরেখা তৈরি করে সে অনুসারে অগ্নিনির্বাপণ কর্মকান্ড সমন্বয় করতে কেন ব্যর্থ হচ্ছে সেটি বিশ্লেষণ প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠান ও দফতরগুলোর সমন্বয়হীনতার বলি হচ্ছে কতগুলো তাজা প্রাণ, এ থেকে উত্তরণ আবশ্যক। দেশে বিদ্যমান প্রায় ৫৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অগ্নিকান্ড ও বিস্ফোরণ নিয়ে পাঠ্যসূচি থাকা আবশ্যক। ‘ফায়ার সেফটি ম্যানেজমেন্ট’ বা ‘ফায়ার সেফটি ইঞ্জিনিয়ারিং’ শিরোনামে পৃথক কোর্স চালু করা গেলে অগ্নিকান্ড, বিস্ফোরণ ও সমজাতীয় ঘটনার কারণ অনুসন্ধান সহজে সম্ভব হবে। কর্মশালায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী বলেন, সারা দেশে ফায়ার সার্ভিস ১৫৯৫টি ভবন পরিদর্শন করে। এর মধ্যে সন্তোষজনক মাত্র ২৪টি, বাকিগুলোর মধ্যে ৬৭৪টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৮৯৭টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২৪টি বাদে সব ভবন মালিককে নোটিস করা হয়েছে। তবে তিতাস কর্তৃপক্ষকে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ করতে হবে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, আগুন নির্বাপণে পানির উৎস দরকার। কোনো স্থাপনায় যদি ১০০ টাকা খরচ করা হয় তবে ২ টাকা ফায়ার সেফটিতে খরচ করলে নিরাপদ থাকতে পারে। ১০০ জনে ১৮ জন প্রশিক্ষিত জনবল থাকলে ওই স্থাপনা বা প্রতিষ্ঠান নিরাপদ থাকবে। ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্যোগব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিটি আগুনে উৎসুক জনতাকে সামাল দেওয়া কঠিন, এটি বন্ধ করা দরকার। বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। কেউ যদি বিল্ডিং কোড না মানে তবে তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান খান বলেন, আমরা রিস্ক সোসাইটি। উন্নয়নের সব কিছুই আছে। কেবল জাস্টিস নেই। আমরা সব মানি, কিন্তু ফায়ার গাইড লাইন মানি না। জামাকন সদস্য কাওসার আহমেদ বলেন, আইন আছে, মনিটরিং নেই। অগ্নিনিরাপত্তা ও আইনের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সব সংস্থার সমন্বয় করতে হবে, পাশাপাশি তাদের জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি সব সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ও জরুরি। ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা বলেন, বিভিন্ন দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে, দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর