আনিছুর রহমান ২০১৯ সালে ভারতে গিয়ে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করেন। একজন দালাল তাকে প্রলুব্ধ করেছিলেন। আনিছুরের দাবি, যাকে তিনি কিডনি দিয়েছেন, তার কাছ থেকে যত টাকা নেওয়া হয়, তার চেয়ে তাকে দেওয়া হয় অনেক কম। ভারতে কিডনি প্রতিস্থাপনে রোগীদের ব্যাপক চাহিদা আছে ভেবে পরে নিজেই একটি চক্র গড়ে তোলেন আনিছুর। ভারতে যারা এই কারবারে জড়িত, তাদের সঙ্গে গড়ে তোলেন সখ্য। সম্প্রতি ওই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তারা হলেন- দলনেতা আনিছুর রহমান, আরিফুল ইসলাম রাজিব, সালাউদ্দিন তুহিন, সাইফুল ইসলাম ও এনামুল হোসেন। গত বুধবার রাজধানীর ভাটারা, বাড্ডা ও বনানী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মোসতাক আহমেদ। তিনি বলেন, অনলাইনে বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে ডোনার সংগ্রহ করে বৈধ ও অবৈধভাবে বিমানে বা স্থলপথে ২০১৯ সাল থেকেই ভারতে কিডনি পাঠাতে শুরু করেন আনিছুর। পাঁচজনকে গ্রেফতারের পর কিডনিদাতা এবং গ্রহীতার ভুয়া অঙ্গীকারনামা-চুক্তিপত্র, পাসপোর্ট, এটিএম কার্ড, ভারতীয় রুপি, বাংলাদেশি টাকা জব্দ করা হয়েছে। কিডনি গ্রহীতা বিত্তশালী হলে কিডনি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকাও নেওয়া হতো। কিন্তু কিডনিদাতাকে দেওয়া হতো ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। ভারতের চক্রটি বাকি টাকার প্রায় অর্ধেক নিয়ে যেত। বাকি টাকার বেশির ভাগ রাখতেন আনিছুর।
চক্রটি প্রায় ৫০ জনের কিডনি কেনাবেচা করেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা মানুষদের টার্গেট করে টাকার লোভ দেখাত তারা। অসুস্থদের বিনামূল্যে চিকিৎসার কথা বলেও ফাঁদ ফেলত। চক্রটি কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করে। একটি দল সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আরেকটি দল অভাবে থাকা মানুষদের সঙ্গে কথা বলত। ট্রাভেল এজেন্টের মালিক সাইফুলের নেতৃত্বে অপর দলটি রোগীদের ভারতে পার করত। তারা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামে জাল কাগজপত্রও তৈরি করত। আনিছুর ঢাকায় বসে টাকা লেনদেনের বিষয়সহ পুরো বিষয়টি তদারকি করতেন।
জানা গেছে, সাহেবানা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি মূলত কিডনি ডোনারদের পার্শ্ববর্তী দেশে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট, ব্যাংক এনডোর্সমেন্ট, মেডিকেল ডকুমেন্টস, ভিসা এবং অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করেন। যেসব ব্যক্তির কাগজপত্র সঠিক থাকে না কিংবা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের ঘাটতি থাকে, তাদের কাগজপত্র জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করা হতো। ২০২১ সালে সে একই অপরাধের জন্য র্যাবের হাতে আটক হয়েছিল।
