রাজধানীতে পরিবহনের তুলনায় সড়ক রয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ, যেখানে নগর পরিবহন চলাচলে হিমশিম খেতে হয়। বিপরীতে এই স্বল্প সংখ্যক সড়ক অবৈধভাবে ব্যবহার করে চলছে দেশের বিভিন্ন জেলার বাস। দিনে রাতে সমানতালে এসব বাস সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আবার এসব আন্তজেলা বাসের কাউন্টার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন সড়কে। ঢাকার যানজট ও পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলার জন্য এসব কাউন্টার অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামপুরা-কুড়িল বিশ্বরোড সড়ক, মিরপুর সড়ক, পান্থপথ সড়ক, কলাবাগানসহ রাজধানীর প্রতিটি সড়কে দিন ও রাতে সমানতালে চলাচল করছে বিভিন্ন জেলার আন্তজেলা বাস। এর মধ্যে রামপুরা-কুড়িল বিশ্বরোড সড়কে চলাচল করছে ইকোনো, আল বারাকা, লাল সবুজসহ অনেকগুলো আন্তজেলা বাস। যেগুলো চলাচল করছে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী থেকে টঙ্গী পর্যন্ত। একই রোডে চলাচল করছে চাঁদপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত আল আরাফাহ সার্ভিস। হামদান বাস খুলনা থেকে এই রুটে উত্তরবঙ্গে যাতায়াত করে। একই রুটে শেরপুর থেকে সাদিয়া বাস, চট্টগ্রাম থেকে টঙ্গী সোহাগ বাস চলাচল করছে। এই রুটে চলাচলকারী আন্তজেলা বাসগুলোর ১০-১২টি পয়েন্টে কাউন্টার রয়েছে।
একই সঙ্গে রাজধানীর কলাবাগান, শুক্রাবাদ, আসাদগেট, মালিবাগ এলাকায় দূরপাল্লার পরিবহনগুলোর টিকিট কাউন্টার আছে। এসব কাউন্টারের সামনে দিন ও রাতের বেলা নির্দিষ্ট সময় পর পর বাস এসে থামায়। চলে যাত্রী ও লাগেজ তোলার কাজ। ফলে এসব সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। দূরপাল্লার বাস কোম্পানিগুলোও টার্মিনাল ছেড়ে শহরের ভিতরে বাসস্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে। শহরের ভিতর থেকেই নির্দিষ্ট সময়ের পর পর ছেড়ে যায় আন্তজেলা রুটে চলাচলকারী বাসগুলো। সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠায়। ফলে সৃষ্টি হয় যানজট। আশুলিয়া, আমিনবাজার, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালীসহ ঢাকা থেকে বের হওয়ার পয়েন্টগুলোতে দিন ও রাতে যানজটের কবলে পড়তে হয় যাত্রীদের। সড়কে অবৈধ বাসস্ট্যান্ডের কারণে সব সময় চলাচলকারী নাগরিকদের রাস্তায় আটকে থাকতে হয়। আরও জানা গেছে, ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে রাজধানীর সবচেয়ে বড় আন্তজেলা বাস টার্মিনাল গাবতলী। এটিতে একসঙ্গে ৪০০ বাস রাখা যায়। ২২ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এ বাস টার্মিনাল দিয়ে প্রতিদিন ৪০ হাজার যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করে বলে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) এক গবেষণায় উঠে এসেছে। সেখানে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির টিকিট কাউন্টার রয়েছে ২৪০টি। আয়তনে ঢাকার দ্বিতীয় বৃহৎ আন্তজেলা বাস টার্মিনাল সায়েদাবাদ। ১০ একর জায়গার ওপর নির্মিত এ টার্মিনালের বাস ধারণক্ষমতা ২০০টি। যদিও প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার যাত্রী এ টার্মিনাল ব্যবহার করে। মোট টিকিট কাউন্টার রয়েছে ১০৮টি। অন্যদিকে ৯ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা মহাখালী আন্তজেলা টার্মিনালের ধারণক্ষমতা ২০০ বাসের। প্রতিদিন এ টার্মিনাল ব্যবহার করে গড়ে ২৫ হাজার যাত্রী। মহাখালী টার্মিনালে বাস কাউন্টার আছে ৪০টি। আন্তজেলা বাস টার্মিনালগুলোকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী, কেরানীগঞ্জের বাঘাইর, নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর, তুরাগের ভাটুলিয়া, রূপগঞ্জের ভুলতা ও সাভারের হেমায়েতপুরে নতুন বাস টার্মিনাল তৈরি করা হবে। এ জন্য একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশার কাজ করেছে ডিটিসিএ। সংস্থাটির করা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাত্র ৪০ শতাংশ আন্তজেলা বাস বিদ্যমান তিন টার্মিনাল ব্যবহার করে। বাকি ৬০ শতাংশ বাস শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে পরিচালিত হয়। এগুলোই শহরের ভিতরে যানজট ও সড়কে বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েটের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, পৃথিবীর উন্নত শহরগুলোর কোথাও আন্তজেলা বাস শহরের ভিতরে প্রবেশ করে না। এসব বাসের টার্মিনালও থাকে শহরের বাইরে। তবে সেই টার্মিনাল ব্যবহার করা যাত্রীরা যেন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে সহজেই পৌঁছতে পারে, সেজন্য রিং রোড, বাইপাস রোডের মতো ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঢাকার চিত্রটি ঠিক উল্টো। এখানে শহরের ভিতরেই তিনটি আন্তজেলা বাস টার্মিনাল। আবার আন্তজেলা বাসের একটা বড় অংশই পরিচালিত হয় টার্মিনালের বাইরে বিভিন্ন সড়কের ধার থেকে। এগুলো যানজট ও পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা দুটোই বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ বিষয়ে বিআরটিএ পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই- রব্বানী বলেন, টার্মিনালের বাইরে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ব্যবহার করে আন্তজেলা বাস চলাচলের অনুমতি নেই। এসব বাসের রুট পারমিটও বিআরটিএ দেয়নি। অবৈধভাবে চলছে আন্তজেলা বাসগুলো। এসব অবৈধ বাস নিয়ন্ত্রণে মামলাসহ আনুষঙ্গিক কাজ করার কথা পুলিশের। কিন্তু পুলিশের সামনে চলছে বাসগুলো। যেহেতু অবৈধ সে জন্য পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে, কিন্তু তারা নিচ্ছে না।