সরকার পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ, ১৪ দলসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের নামে আরও মামলা দায়ের হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- গাজীপুর : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের গাছা থানাধীন কুনিয়া বড়বাড়ী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া রংপুরের পীরগাছা এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় রাজমিস্ত্রি হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৮৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরও একটি হত্যা মামলা রুজু হয়েছে। ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে মামলাটি দায়ের করেছেন রংপুর জেলার পীরগাছা থানার জুয়ান এলাকার বাসিন্দা মো. ইনছার আলী। মামলায় কেন্দ্রীয় ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে রংপুরের আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদেরও আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, রংপুরের পীরগাছা-কাউনিয়া এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য টিপু মুন্সি, সাবেক মন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাদ্দাম ও সাধারণ সম্পাদক ইনান। মামলায় আরও ৫০০-৭০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মাদারীপুর : মাদারীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তাওহীদ সন্ন্যামাত (২১) হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মাদারীপুরের চার সাবেক এমপিসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব কামরুল হাসান বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন। এতে ৯২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মাদারীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য শাজাহান খান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবদুস সোবহান গোলাপ, নূর-ই আলম চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে।
নরসিংদী : নরসিংদীর মাধবদীতে টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিক জামান মিয়া (১৭) নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এই মামলায় আরও ৩০০ থেকে ৩৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। গত রবিবার নিহত জামান মিয়ার ভগ্নিপতি মো. আঙ্গুর মিয়া নরসিংদীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল হকের আদালতে মামলার আবেদন করেন। এই সময় আদালতের বিচারক পুলিশকে মামলাটি তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দেন।
নাটোর : নাটোরে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান রবিনকে হত্যার অভিযোগ এনে নাটোর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ ১৩৫ জনের নামে থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে সদর থানায় নিহতের মামা সোহেল রানা অভিযোগটি দায়ের করেন। মামলার অভিযোগকারী সোহেল রানা শহরের উত্তর বড়গাছা এলাকার বাসিন্দা।
রাজশাহী : ভোট কেন্দ্র দখল করে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মারা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলি করার অভিযোগে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরীর নামে থানায় দুটি মামলা হয়েছে। রবিবার রাতে গোদাগাড়ী থানায় এ দুটি মামলা হয়েছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান।
বাদীই জানেন না মামলার খবর : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সিলেটের গোলাপগঞ্জে গৌছ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। থানায় দায়ের করা মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদসহ ১৩৫ জনের নামোল্লেখ করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালালেও রহস্যজনক কারণে মামলায় কোনো পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়নি। যদিও গৌছ নিহতের পর দাবি উঠেছিল পুলিশের গুলিতেই তিনি মারা গেছেন। মামলার বাদী গৌছ উদ্দিনের ভাতিজা রেজাউল করিমসহ পরিবারের সদস্যদের দাবি, এ মামলার ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না। কাজের কথা বলে কিছু লোক রেজাউলের আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে স্বাক্ষর জাল করে এই মামলা দায়ের করেছে।
জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট গোলাপগঞ্জ পৌরসদরে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। এ সময় গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ঘোষগাঁওয়ের মৃত মোবারক আলীর ছেলে গৌছ উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। হত্যাকান্ডে র ঘটনায় গত শনিবার গোলাপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী হিসেবে উল্লেখ করা হয় নিহত গৌছ উদ্দিনের ভাতিজা উত্তর ঘোষগাঁওয়ের সেলিম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিমের নাম। মামলার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে চাউর হলে মামলার বাদী রেজাউল করিম এবং তার পরিবারের সদস্যদের দৃষ্টিগোচর হয়। এর পর এক ভিডিও বার্তায় রেজাউল করিম মামলা দায়েরের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমার চাচা নিহতের ঘটনায় কে বা কারা আমার স্বাক্ষর জাল করে থানায় মামলা দায়ের করেছে। আসামি করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে হয়রানি করা হচ্ছে। এ অভিযোগ সম্পর্কে আমি বা আমার পরিবারের সদস্যরা কিছুই জানেন না।’
নিহত গৌছের ভাই আবুল কালাম তার বক্তব্যে বলেন, ‘কে বা কারা নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করছে। আমরা থানায় কোনো মামলা করিনি। আমার মা অসুস্থ। তাকে নিয়ে আমরা ব্যস্ত। আমরা কোনো নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করব না।’
রাজবাড়ী : রাজবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা ও গুলি বর্ষণের অভিযোগে উৎস সরকার নামে এক শিক্ষার্থী রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। উৎস সরকার রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাবলু সরকারের ছেলে। রবিবার দিবাগত রাতে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। গতকাল বিকালে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইফতেখারুল আলম মামলার বিষয়টি প্রধান নিশ্চিত করেন। মামলায় রাজবাড়ী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জাকারিয়া মাসুদ রাজীবকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিন শেখ, সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইফতি হক সৌরভ, জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সাইফুর ইসলাম সোহাগসহ ৪৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগের ৩৬৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা। গাইবান্ধা জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক আবদুল হাই বাদী হয়ে সদর থানায় এ মামলাটি করেন। মামলার এজাহারে জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহাবুব আরা বেগম, গাইবান্ধা সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ্ সারোয়ার কবির, গাইবান্ধা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুর জামান আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের ১১৪ জনের নাম উল্লেখ করে ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হয়েছে।