পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে ইতালির উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পূয়ালী গ্রামের সিরাজ মুন্সির দুই ছেলে আল-আমিন ও মিলন মুন্সি। সাত মাস আগে ধারদেনা করে দালালের কাছে দিয়েছিলেন ৩০ লাখ টাকা। তবে চার মাস ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন দুই ভাই। হঠাৎই মঙ্গলবার রাতে খবর আসে নৌ দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তারা। এতে পরিবারে বিরাজ করছে মাতম। শুধু আল-আমিন ও মিলনই নন, একই গ্রামের শাহিন মাতুব্বর, শান্ত খান, মনির হোসেন ও জাফর মিয়াও মারা গেছেন বলে দাবি গ্রামবাসী ও স্বজনদের। তারা একই সঙ্গে ইতালির পথে পাড়ি জমিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে ঘটনার পর থেকে আদম দালাল ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বর পলাতক। সরেজমিন ও ভুক্তভোগী পরিবারসূত্রে জানা গেছে, সাত মাস আগে অবৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়া যান মিলন ও আল-আমিন মুন্সি। সঙ্গে ছিলেন একই গ্রামের শাহিন মাতুব্বর, শান্ত খান, মনির হোসেন ও জাফর মিয়া।
মিলন ও আল-আমিনের বাবা সিরাজ মুন্সি বলেন, ‘গোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বর আমার দুই ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য ৩০ লাখ টাকা নেন। এরপর দুই ছেলেকে তিনি কোথায় পাঠিয়েছেন সাত মাস ধরে তার কোনো খোঁজ দিতে পারেননি। আমার দুই ছেলেকে জীবিত বা মৃত ফেরত চাই।’ নিখোঁজ দুই ভুক্তভোগীর খালাতো ভাই মানিক জানান, ‘মিলন ও আল-আমিন লিবিয়া গেমস ঘর থেকে বেরিয়ে একসঙ্গে নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়। পথিমধ্যে তাদের নৌকার তলা ফেটে ডুবে যায়। এতে নৌকায় থাকা অন্য যাত্রীসহ মিলন ও আল-আমিনও নিখোঁজ হয়। তাদের মৃত্যুর খবর মাদারীপুরের আরেক যুবক দেশে এসে আমাদের জানিয়েছে। সে অন্য একটি নৌকায় ছিল। সে দেশে ফিরে জানিয়েছে মিলন ও আল-আমিন আর নেই।’ নিখোঁজ মিলন মুন্সির স্ত্রী ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী ও দেবর একসঙ্গেই ছিল। রাতে একজন খবর দিয়েছে তারা মারা গেছে। শুধু তারা দুজনই নয়, একই সঙ্গে আরও চারজন ছিল। তারাও নিখোঁজ।’ ডাসার থানার ওসি এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জেনেছি। ভুক্তভোগীর বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছি। মিলন ও আল-আমিনের নিহতের খবরটি সামাজিক যোগাযোগমাধামেও ভাইরাল হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ডাসারের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘ডাসারে কয়েকজন নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি শুনেছি। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেব।’