সেনা নিরাপত্তায় স্বস্তিতে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরেছেন রাঙামাটির সাজেকে আটকে পড়া পর্যকটরা। গতকাল সকাল সাড়ে ৬টায় সাজেকে আটকা প্রায় ১ হাজার ৪০০ পর্যটককে ১১২টি জিপ, ১০৯টি বাইক ও ২৩টি সিএনজি (অটোরিকশা) করে নিরাপদে বাঘাইহাট ও খাগড়াছড়ি সড়ক পথে সেনাবাহিরীর নিরাপত্তায় চট্টগ্রামে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। রাঙামাটি বাঘাইছড়ি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার একথা জানিয়েছেন। এর আগে গত সোমবার চারটি হেলিকপ্টারে করে প্রায় ৫০ জন পর্যটককে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়িতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফের তরফে ডাকা ৭২ ঘণ্টা অবরোধের কারণে গত শনিবার থেকে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালিতে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা আটকা পড়েন। তবে অবরোধ চলাকালে তাদের নিরাপত্তা দেন খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের তত্ত্বাবধায়নে রাঙামাটি বাঘাইছড়ির বাঘাইহাট সেনা জোনের সদস্যরা। একই সঙ্গে বাঘাইহাট সেনা জোনের তত্ত্বাবধানে সাজেকে আটকা পড়া পর্যটকদের রিসোর্ট ভাড়া ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ পর্যন্ত কমানো হয়। একই সঙ্গে পর্যঠকদের সামগ্রিক বিষয় খেয়াল রাখা হয়।
এদিকে, পাহাড়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাজেকে পর্যটকদের আগামী তিন দিন ভ্রমণ না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান। তিনি বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাহাড়ে আপাতত পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও তিন দিনের জন্য সাজেক ভ্রমণ থেকে পর্যটকদের নিরুৎসাহীত করতে হবে। সম্প্রতি পাহাড়ে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার রেশ এখনো কাটেনি। তাই নতুন করে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। গতকাল দুপুরে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে এক বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানান জেলা প্রশাসক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটির পুলিশ সুপার মো. ড. এস এম ফরহাদ হোসেন, রাঙামাটি অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোতাছেম বিল্যাহ।
সাজেক থেকে ফেরার পথে দুই পর্যটককে অপহরণের চেষ্টা : অপরদিকে, সাজেক থেকে খাগড়াছড়ি ফেরার পথে দুই পর্যটক ও তাদের গাড়িচালককে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে সেনাবাহিনী ও পুলিশের তৎপরতায় তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, আমরা অপহরণের মামলা নিব। বিষয়টা তদন্ত করব। পাহাড়ে কারা কিডন্যাপিং বা অপহরণের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে আমরা খুঁজে বের করব এবং আইনের আওতায় আনব।’
অপহরণ চেষ্টার শিকার দুই পর্যটক হলেন ভিকটিম ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার বাসিন্দা এস এম নাহিদ উজ্জামান ও মামুন ফকির। গতকাল বিকালে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপারের কক্ষে সাংবাদিককের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন ভুক্তভোগীরা। এ সময় তাদের একজন বলেন, মঙ্গলবার সকালে সাজেক থেকে ফেরার পথে দীঘিনালার জামতলী এলাকায় পৌঁছালে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কয়েকজন অচেনা ব্যক্তি আমাদের ব্যক্তিগত গাড়ির গতিরোধ করে। পরে আমাদের রাস্তা থেকে একটু ভিতরে পার্শ্ববর্তী করাত কলের পাশে নিয়ে মোবাইল, জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে নেয় তারা। আমাদের কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। এ সময় তারা মারধরও করে। একপর্যায়ে দরকষাকষিতে ২০ লাখ টাকায় রাজি হই আমরা। পরে সাজেকে রিসোর্ট কেনার কথা বলে পরিবারের কাছে ওই পরিমাণ টাকা চাইতে বলে। বিষয়টি আমার এক স্বজনকে (মামা) জানাই। পরে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবগত করা হয়। পুলিশ সুপার আমার ব্যক্তিগত নম্বরে যোগাযোগ করলে অপহরণকারীরা নম্বরটি ট্রু কলারে চেক করে। ট্রু কলারে পুলিশ সুপারের নাম দেখে অপহরণকারীরা আমাদের ছেড়ে দেয়। এ সময় অপহরণকারীরা পুলিশকে কিছু না বলার ভয়ভীতি দেখায়। দুপুর দেড়টার দিকে তারা আমাদের ছেড়ে দেয়। ওই ভুক্তভোগী আরও বলেন, অপহরণকারীরা সাজেকে আমরা কোন রিসোর্টে ছিলাম এ ব্যাপারে অবগত ছিল। তাদের কথাবার্তায় মনে হয়েছে তারা আমাদেরকে আগে থেকেই অনুসরণ করেছে এবং ঘটনাটি পূর্ব-পরিকল্পিত।