চট্টগ্রাম নগরীতে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে গান গাইতে গাইতে শাহাদাত হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এক কিশোরসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন ফরহাদ আহমদ চৌধুরী জুয়েল (৪২), আনিসুর রহমান ইফাত (১৯) ও কিশোর মো. সালমান।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে মো. সালমানকে কিশোরগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কার্যালয়ের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘ভিকটিম মূলত দিনমজুর। তার নির্দিষ্ট পেশা নেই। তাকে ওই এলাকায় দেখে সন্দেহের ভিত্তিতে মারধর করা হয়। আপনারা মব জাস্টিস নামে একটা টার্মের নাম শুনেছেন। কিন্তু এটা মব ইনজাস্টিস হতে পারে। শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে তাকে বেশ কয়েক দফায় মারধর করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।’ গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রসঙ্গে সিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘মূল অভিযুক্ত জুয়েল ভাসমান ব্যবসায়ী। সরকার পতনের পর তিনি ‘চট্টগ্রাম ছাত্র-জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেন। সেখানে নিজের পরিচিতজনদের যুক্ত করেন। ওই গ্রুপে ১৩০ জন সদস্য আছে। ভিকটিমকে বেঁধে পেটানোর সময় ওই গ্রুপে ভিডিওটা দেওয়া হয়। তখন গ্রুপে বলা হয় একজনকে ধরা হয়েছে যিনি মোবাইল চোর বা ছিনতাইকারী। তাকে মারতে হবে সবাই আসেন। এরপর একে একে দলে দলে গিয়ে তাকে পেটানো হয়। ওই গ্রুপের মাধ্যমে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে।’ আরও জানানো হয়, ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের এডমিন জুয়েলের নেতৃত্বে হত্যাকান্ডটি হয়েছে। সে বিভিন্ন ভাসমান ব্যবসা করত। তবে তার কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। আরেক অভিযুক্ত সালমানেরও নির্দিষ্ট পেশা নেই। তবে আনিসুর রহমান ইফাত চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকার একটি কলেজের শিক্ষার্থী। বাকি অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ। এদিকে, শাহাদাতকে হত্যার পর তার স্ত্রী শারমিন আক্তার গণমাধ্যমে দাবি করেছিলেন, নগরীর লালখান বাজার এলাকার সাগর নামে এক যুবক এই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। ওই যুবকের সঙ্গে শাহাদাতের পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধ ছিল। সে পেটানোর ঘটনা মোবাইলে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করেছিল। ভিডিওতে সাগরও ছিল।
শারমিন আক্তারের ওই দাবি সঠিক নয় দাবি করে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। অন্য কোনো কারণে সাগর ভিকটিমকে ডেকেছিল। আর টাকা চাওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ভিডিওতে সাগরের কোনো প্রকার অস্তিত্ব দেখা যায়নি।’ উল্লেখ্য, গত ১৪ আগস্ট চট্টগ্রামের বদনা শাহ মাজারের সামনে থেকে শাহাদাতের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন শাহাদাতের চাচা মো. হারুন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করেন। এতে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। ঘটনার ১ মাস ৬ দিন পর গত ২১ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাহাদাতকে বেঁধে পেটানোর একটি ভিডিও ভাইরাল হলে তার পরিচয় মেলে।