ইরানে হামলা চালানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। স্থানীয় সময় শনিবার (৬ অক্টোবর) তেলআবিবের কিরিয়া সামরিক সদর দপ্তরে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এদিকে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে করে বৈরুত প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, টাইমস অব ইসরায়েল, আল জাজিরা।
প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, সামরিক সদর দপ্তরে ভাষণ দেওয়ার সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসরায়েলের প্রতিশোধ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং তা করবে। ইসরায়েলের দায়িত্ব ও অধিকার আছে আত্মরক্ষা করার এবং ইরানের আক্রমণের জবাব দেওয়ার। ইসরায়েল তা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এখন যুদ্ধের দামামা বাজছে মধ্যপ্রাচ্যে। প্রথমে এ যুদ্ধ শুরু হয়েছিল গাজায়, তা এবার লেবানন হয়ে ধীরে ধীরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে যাচ্ছে। ইসরায়েল যদি ইরানরে ওপর পাল্টা হামলা শুরু করে তাহলে তা কীভাবে হতে পারে, তার একটি বর্ণনা তুলে ধরেছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, মার্কিন স্যাটেলাইটের নজরদারি এবং ইসরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের সাহায্য নিয়ে দেশটির টার্গেট হতে পারে তিন দিকে। প্রথমত, ইরানের সেনা ঘাঁটিগুলোয় হামলা করতে পারে ইসরায়েল। বিশেষত যেসব ঘাঁটি থেকে ইরান শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, সেই সব ঘাঁটি টার্গেট হতে পারে। ঘাঁটিগুলোর লঞ্চ প্যাড, কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার ইত্যাদি গুঁড়িয়ে দেওয়া তেলআবিবের প্রাথমিক লক্ষ্য হতে পারে। পরের বড় টার্গেট থাকবে পরমাণু কেন্দ্রগুলো। পাশাপাশি হামলা হতে পারে তেলের খনিতেও। এখানে আঘাত করতে পারলে ইরানের আর্থিক পরিকাঠামো ভেঙে দেওয়া সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে ইরান বসে থাকবে না এবং কালবিলম্ব না করে পাল্টা আঘাত হানবে। কারণ ইরানের শক্তিও প্রবল। সে কারণে দুই দেশের সংঘাত ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যে ঘনিয়ে আসছে যুদ্ধের কালো মেঘ।
বোমা বর্ষণে বৈরুত ধ্বংসস্তূপ : লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে টানা বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। বিশেষ করে শনিবার রাত থেকে চলছে ব্যাপক বোমা হামলা। এতে করে বৈরুতে শুধু কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী উঠতে দেখা যাচ্ছে। জীবন বাঁচাতে সেখানকার মানুষ পালাচ্ছেন অন্যত্র। একটি খবরে বলা হয়, একটি জায়গায় গতকাল টানা দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। যুদ্ধবিমান থেকে বৈরুতের দক্ষিণের শহরতলিগুলোতে চারটি নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব এলাকা থেকে আগুনের বিশাল শিখা থেকে ধোঁয়া ঘণ্টাখানেক ধরে উঠতে দেখা গেছে। এদিকে শহরতলির কাছের এলাকা সাবরাতে সড়কে বহু মানুষকে দেখা গেছে। তারা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ মোটরসাইকেলে, কেউবা পায়ে হেঁটেই পালাচ্ছেন। হামলার কারণে বৈরুতে লেবাননের একমাত্র বিমানবন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
শনিবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে স্থলাভিযানে তারা ৪৪০ হিজবুল্লাহ যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। ধ্বংস করেছে হিজবুল্লাহর নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রায় দুই হাজার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যস্থল। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল ইসরায়েলি হামলায় ১০৫ জন নিহত হয়েছেন। দেশটিতে এ পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে দেশটিতে আহত হয়েছেন ৬ হাজারের বেশি নাগরিক। ১০ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। ঘরছাড়া মানুষ জাইতুনে উপকূল এলাকায় খোলা আকাশ ও রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন।