তিন বছর আগে রাজধানীর কুড়িলে রেলের ‘জলাধার’ ভরাট করে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ শুরু করেছিল মিলেনিয়াম হোল্ডিংস লিমিটেড। এতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কায় প্রতিবাদে নামেন স্থানীয়রা। উচ্চ আদালতে রিট করেন। আদালত স্থিতাবস্থা জারি করেন। ফলে দেড় বছর ধরে বন্ধ আছে কাজ। স্থিতাবস্থা জারি থাকলেও গত নভেম্বর থেকে জায়গাটিতে আবারও ভরাট কাজ শুরু হয়েছে। হোটেলের সাইনবোর্ড উঠে এবার বসেছে নতুন সাইনবোর্ড, যেখানে লেখা ‘খিলক্ষেত ইডেন পার্ক, বাস্তবায়ন ও তত্ত্বাবধানে : খিলক্ষেত ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’।
অবাক করা বিষয় হলো- ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এলাকায় রেলের হাজার কোটি টাকার ওই সম্পত্তিতে ১৫ দিন ধরে মাটি ভরাট চললেও জানে না রেলওয়ে বা সিটি করপোরেশন। সরেজমিন দেখা গেছে, ভরাটের কারণে বিলুপ্ত ওই ‘জলাধারের’ দুই দিকে কুড়িল ফ্লাইওভার। একদিকে এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়ে। জমি লাগোয়া ৩০০ ফুট এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগস্থল। ঢাকা থেকে সারা দেশের রেলসংযোগ চলে গেছে জমিটি ঘেঁষে। ইতোমধ্যে ১.৮৪ একর জায়গার পুরোটাই ভরাট করা হয়ে গেছে। এখন চলছে সমান করার কাজ। আগামী বিজয় দিবসে জায়গাটিতে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের ব্যানার লাগানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন পর গত মাসের ২৩ তারিখ থেকে ফের জায়গাটি ভরাট শুরু হয়। কিছুদিন আগে এক গ্রুপ এসে সেখানে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড (আংশিক) ছাত্রদলের ব্যানার লাগিয়ে যায়। পরে আরেক গ্রুপ এসে ব্যানার খুলে পার্কের সাইনবোর্ড বসিয়ে দেয়। তারা নিজেদের সিটি করপোরেশনের কর্মী পরিচয় দেয়। বিষয়টি জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম ওখানে পার্ক নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। তবে রেল জায়গা হস্তান্তর করেনি। তাই পার্কের বিষয়টি জানা নেই। রেলের জায়গা, রেলই বলতে পারবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় (কমলাপুর) ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা আবদুস সোবাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কারা পার্ক নির্মাণ করছে জানা নেই। কাউকে পার্ক নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়নি। কেউ অনুমতির জন্য আবেদনও করেনি। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা রেলওয়ের জমি থেকে অবৈধ দখল নিজ নিজ উদ্যোগে সরাতে গত ৫ ডিসেম্বর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। নির্দেশনা না মানলে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খিলক্ষেত ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ও থানা বিএনপির নেতা জহির উদ্দিন বাবু বলেন, পার্কটি জনসাধারণের উপকারের জন্য নিজেরা টাকা তুলে নির্মাণ করছি। অনুমতির জন্য আমরা রেলের কাছে আবেদন করব।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আক্তার হোসেন বলেন, সরকারি জায়গায় অনুমতি ছাড়া পার্ক বা কোনো স্থাপনা বানানোর অধিকার কারও নেই। বিএনপি এগুলো সমর্থন করে না। বিষয়টা শোনার পরই আমি নিষেধ করেছিলাম। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
এদিকে পার্ক নির্মাণ নিয়ে গত ২ ডিসেম্বর রেলওয়ের মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ দিয়েছে মিলেনিয়াম হোল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল। অনুলিপি পাঠিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে। তিনি অভিযোগ করেছেন, জায়গাটি হোটেল প্রকল্পের জন্য রেলওয়ে থেকে তাদের লিজ নেওয়া। গত ২৩ নভেম্বর রাতে স্থানীয় বিএনপির খিলক্ষেত থানার নেতা শাহিনুর আলম মারফত, মো. ফজলুল হক, সোহরাব খান স্বপনসহ কমপক্ষে ৩০ জন ওই জায়গায় গিয়ে তাদের প্রকল্পের ও আদালতের স্থিতাবস্থার সাইনবোর্ড তুলে ফেলে। পার্কের নামে মাটি ভরাট শুরু করে। বিষয়টি খিলক্ষেত থানায় জানালে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করলেও পরে তারা আবার শুরু করে।
প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সচিব মো. ইমরান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশে হোটেল নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছি। এখন রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে স্থানীয় একটা শ্রেণি জায়গাটি দখলের চেষ্টা করছে। আমরা আইনিভাবে এগোচ্ছি।