চট্টগ্রামের অপরাধের অন্ধকার জগৎ নিয়ন্ত্রণ করছে শতাধিক সন্ত্রাসী। খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে ভূমি দখল-বেদখল সবই নিয়ন্ত্রণ করে এসব সন্ত্রাসী। তাদের মধ্যেই কেউ কেউ আবার প্রকাশ্যে পুলিশকে হত্যার হুমকি দেওয়ার নজিরও রয়েছে। এসব ডনের কার্যক্রমে এলাকার লোকজন যেমন রয়েছে আতঙ্কে, তেমনি তাদের গ্রেপ্তারে প্রশাসনও রয়েছে দোটানায়।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার ও মুখপাত্র মাহমুদা বেগম বলেন, ‘সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশ। ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধ রোধ করতে টহল জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে পুলিশি অভিযানও।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম নগরীতে অপরাধ জগতে ঝান্ডা উড়াচ্ছে শতাধিক অপরাধী। যাদের কারও কারোর পুরনো অপরাধ রেকর্ড থাকলেও ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর তারা এলাকায় ত্রাস হিসেবে আবির্ভাব ঘটেছে। তারা ছিনতাই, চাঁদাবাজি, জায়গা দখল-বেদখলসহ নানান ধরনের অপরাধ করছে। তারা একদিকে অপরাধ যেমন করছে, আবার পুলিশকে উল্টো নানান চাপে রাখছে। তারা এখন প্রশাসনের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অপরাধ জগতে মূর্তিমান আতঙ্ক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ। কথায় কথায় গুলি ছোড়াই যেন তার কাছে ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালালে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করতেও দ্বিধা করেনি এ সন্ত্রাসী। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসে প্রকাশ্যে বায়েজিদ থানার ওসিকে হত্যার হুমকি দেয়। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে তিনটি হত্যাকাণ্ড এবং ১০টির বেশি মামলার আসামি হয়ে এরই মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসীর তকমাও রয়েছে। নগরীর চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, বায়েজীদ এবং জেলার হাটহাজারী থানার বাসিন্দারা ছোট সাজ্জাদ বাহিনী নিয়ে রয়েছেন আতঙ্কে। এ এলাকায় দখলবাজি থেকে শুরু করে চাঁদাবাজিসহ সব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে এ সন্ত্রাসী বাহিনী। নগরীর বায়েজিদ, পাঁচলাইশ ও খুলশী এলাকার আতঙ্কের অপর নাম বার্মা সাইফুল ও তার দুই ভাই সবুজ এবং ফাহিম। এর মধ্যে সবুজের বিরুদ্ধে রয়েছে কমপক্ষে ৩৫টি মামলা। খুন, জায়গা দখল, মাদক কারবার, চাঁদাবাজি, অপহরণ থেকে শুরু করে নানা অপকর্ম তাদের বাঁ হাতের খেল। গত ১১ অক্টোবর বায়েজিদ থানার শান্তিনগরে মোহাম্মদ ইমন নামে এক যুবক নিহত হন। ওই ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাদের দুই ভাইকে বহিষ্কার করা হয় স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে। তাদের গড়ে তোলা সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচারে বায়েজিদ-পাঁচলাইশ-খুলশীসহ নগরের বাসিন্দারা দিশাহারা। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে এবং প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চাঁদাবাজি-লুটপাট করাই তাদের বাহিনীর কাছে নিত্য ঘটনা। বার্মা সাইফুল ও তার বাহিনী বায়েজিদ বোস্তামী থানার বার্মা কলোনি, হিলভিউ, মোহাম্মদনগর, আমিন জুট মিলস, আলীনগর, পাঁচলাইশ থানাধীন ফরেস্ট, রংপুর কলোনি ও হামজারবাগ এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে। একই ভাবে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ায় মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে খোকন, এমদাদুল হক বাদশা ও তার দুই ভাই জাবেদুল হক এবং সাদ্দামুল হক। চকবাজার এলাকায় মো. সেলিম। এভাবে চট্টগ্রামের ১৬ থানায় অপরাধ জগতে নতুন ত্রাতা হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে শতাধিক সন্ত্রাসীর। তারা খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, জায়গা দখলসহ নানান ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত।