চট্টগ্রাম বন্দরে ফের দেখা দিয়েছে কনটেইনারজট। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দুই ভাগ করে অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে দুই দফা কর্মবিরতি এবং প্রাইম মুভার চালক-শ্রমিকদের ধর্মঘটের প্রভাবে এ জট তৈরি হয়েছে।
ঈদুল আজহার ১০ দিনের ছুটি শুরুর আগে জটে পড়ায় উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। লম্বা ছুটিতে কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে এ জট আরও প্রকট হয়ে উঠতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। আর তেমনটি ঘটলে বড় ধরনের ধাক্কা আসতে পারে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমে। ব্যাহত হতে পারে পণ্যের সরবরাহ চেইন।
এনবিআর ইস্যুতে এর আগে ১৫ মে থেকে পাঁচ দিন কলমবিরতিতে যান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা। এর বাইরে এক দিন ধর্মঘট পালন করেন কনটেইনার বহনকারী প্রাইম মুভার কর্মচারীরা। তখনো ব্যাহত হয়েছিল বন্দরের পণ্য ডেলিভারি। জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস (২০ ফুট দৈর্ঘ্য হিসেবে)। বন্দরের গতকাল মঙ্গলবারের হিসাব অনুযায়ী কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৩৭৭ টিইইউএস। এখনো ধারণক্ষমতা অতিক্রম না করলেও অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে এ সংখ্যা হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ স্বাভাবিক হ্যান্ডলিং বজায় রাখতে হলে ধারণক্ষমতার ৩০ শতাংশ জায়গা ফাঁকা রাখতে হয়। এই হিসেবে ৩৮ থেকে ৪০ হাজার টিইইউএস হলো আদর্শ মান। গত ১১ মে ইয়ার্ডে কনটেইনার ছিল ৩৬ হাজার ৮০৯ টিইইউএস। মূলত এর পর থেকেই বাড়তে থাকে। গত ১৫ দিনে বেড়েছে প্রায় ৮ হাজার টিইইউএস।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জট তৈরি হলে জাহাজ থেকে নতুন কনটেইনার নামিয়ে রাখার জায়গা থাকে না। তখন জাহাজকে অতিরিক্ত সময় অবস্থান করতে হয়। এক দিন বাড়তি অবস্থানের কারণে একেকটি জাহাজকে গুনতে হয় প্রায় ১০ হাজার মার্কিন ডলার। এ ছাড়া খালাস ব্যাহত হলে জাহাজজটও তৈরি হয়। এতে গড় অবস্থানকাল বেড়ে যায় যা বিশ্বের যে কোনো বন্দরের জন্য নেতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টম বিষয়ক সিনিয়র সহসম্পাদক মনসুরুল আমিন রিয়াজ জানান, দুই দিনের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের পর সোমবার সকাল থেকে দেশের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়কারী শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে। পণ্য খালাস ও ডেলিভারিতে বিলম্ব হওয়ায় বন্দরে কনটেইনার ও জাহাজ জট তৈরি হয়েছে। অনেক মাল আটকা পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। ডেলিভারি নিতে না পারায় অনেক আমদানিকারককে গুনতে হচ্ছে চার গুণ হারে স্টোর রেন্ট। অথচ এ পরিস্থিতির জন্য কোনোভাবেই ব্যবসায়ীরা দায়ী নন। চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব (ভারপ্রাপ্ত) মো. নাসির উদ্দিন বলেন, কনটেইনার ডেলিভারি এরই মধ্যে বেড়েছে। ঈদের ছুটিতেও বন্দরের কাজ-কর্ম স্বাভাবিক থাকবে। কনটেইনার জট থাকলেও বন্দরে এই মুহূর্তে জাহাজ জট নেই বলে তিনি দাবি করেন।