উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় লাশের মিছিল বড় হচ্ছে। হাসপাতালের বেডে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মারা যাচ্ছে আহত শিশুরা। গতকাল আরও ৯ শিশুর প্রাণপ্রদীপ নিভে গেছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩২ জনে। আর আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬৫ জন। যাদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
ঢাকার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রধান উপদেষ্টার সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানিয়েছেন, ২০ জনের লাশ তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, গতকাল দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ জনে এবং আহত ১৬৫ জন। এর মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আহত ৮, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আহত ৪৬ এবং নিহত ১০, ঢাকা মেডিকেলে আহত ৩ এবং নিহত ১, ঢাকা সিএমএইচে আহত ২৮ এবং নিহত ১৬, উত্তরা লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে আহত ১৩ এবং নিহত ২, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে আহত ৬০ এবং নিহত ১, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে আহত ১, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত ১, ইউনাইটেড হাসপাতালে আহত ২ ও নিহত ১ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আহত তিনজন রয়েছে। এদিকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার সিনিয়র শিক্ষক ওয়ালিউল্লাহ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিমান বিধ্বস্তের সময় প্রায় ৩৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী ক্লাসে ছিল। এদের অধিকাংশই হতাহত হয়েছে। তিনি বলেন, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই দুবার বিস্ফোরণ হয়। এরপর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। এতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ দগ্ধ হন অনেকেই। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে যেভাবে যুদ্ধবিমান রাউন্ড দেয়, সোমবারও বিমানটি ঠিক সেভাবে রাউন্ড নেয়, টার্ন করে। আমার কাছে মনে হয়েছিল, পাইলট ঢাকার বাইরে চলে যেতে চেয়েছিলেন।
ঘটনার সময় স্কুলেই ছিলেন ওয়ালিউল্লাহ। সে সময়ের দৃশ্য বর্ণনা করেন এভাবে- বিমান যখন পড়ে যায় তখন দুবার বিস্ফোরণ হয়। প্রথম বিস্ফোরণে হালকা আওয়াজ হয়, তখন আগুন ছিল পেছনের অংশে। ৬-৭ সেকেন্ড পর দ্বিতীয়বার যখন আবার বিস্ফোরণ হয় তখন বিকট শব্দ হয়। এরপর আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব। পাশেই আবার দেড়টার দিকে স্কুলের বাস ছাড়ার কথা। সেই বাস থেকে একজন বের হয়ে বলল, স্যার আমাদের বাঁচান। ওয়ালিউল্লাহ আরও বলেন, আমাদের স্কুল ও কলেজ মিলিয়ে ১০ হাজারের ওপর শিক্ষার্থী। স্কুল সেকশনে শিক্ষার্থী ৩ হাজার ৮০০। যে ভবনে বিমান বিধ্বস্ত হয় সেখানে প্রায় ৩৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী ক্লাসে ছিল।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সুব্রত হাওলাদারের তত্ত্বাবধানে ছয়টি লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। একই সঙ্গে পাঁচটি দেহাবশেষও পরীক্ষা করা হয়েছে। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন সিআইডির ফরেনসিক শাখার উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) জামশেদ আলী। এ সময় দুই অভিভাবকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়, যারা একটি লাশের দাবি করেছেন।
সেনাবাহিনী তদন্ত শুরু : মাইলস্টোনে অনভিপ্রেত বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তদন্তে দোষী প্রমাণিত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মাইলস্টোনে উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালীন, বিকালের দিকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কিছু উৎসুক জনতা ঘটনাস্থল ত্যাগ না করায় উদ্ধার কাজে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে একদল উৎসুক জনতার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও বাদানুবাদের সৃষ্টি হয়, যা এক পর্যায়ে একটি অনভিপ্রেত ঘটনার অবতারণা করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেনাবাহিনী সর্বদা জনগণের পাশে থেকে পেশাদারিত্ব ও সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধের সঙ্গে কর্তব্য পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।