মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৩১ জন। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনায় গোটা দেশ কাঁদছে। শোকের কালো চাদরে ঢাকা পড়েছে দেশ। বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি-২০ সিরিজ এখন শোকের আবহে মুহ্যমান। দুই দলের ক্রিকেটারদের মন ভেঙে গেছে স্কুলছাত্র, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অকালমৃত্যুতে। ভাঙা মন নিয়ে লিটন দাস, জাকের আলি অনীক, মুস্তাফিজুর রহমান, শেখ মেহেদি, শরিফুল ইসলামরা খেলেছেন গতকাল। মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে জাকেরের অবিশ্বাস্য ব্যাটিং এবং লিটন বাহিনীর দুর্দান্ত বোলিংয়ে হেরেছে পাকিস্তান। ৮ রানের শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। এ যেন লিটনদের বেদনাসিক্ত সিরিজ জয়। এখন হোয়াইটওয়াশের অপেক্ষা। আগামীকালের ম্যাচটি জিতলেই প্রথমবারের মতো তিন ম্যাচ টি-২০ সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করবে বাংলাদেশ। এক বছর আগে পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিলেন টাইগাররা। ২০১৫ সালে এক ম্যাচ টি-২০ সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। গতকাল টি-২০ সিরিজটিকে মৃতদের উৎসর্গ করেছেন টাইগার অধিনায়ক লিটন দাস, ‘গতকালের (সোমবার) দুর্ঘটনাটি বাংলাদেশের মানুষের মন ভেঙে দিয়েছে। এমন হৃদয়ভাঙা সময়ে সিরিজ জিতে আমাদের দারুণ লাগছে। সিরিজটি আমরা মৃতদের উৎসর্গ করলাম।’
মাত্র কয়েক দিন আগে পিছিয়ে থেকেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। দ্বীপরাষ্ট্রের বিপক্ষে প্রথমবার সিরিজ জেতে। আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর লিটনের এটা টানা দ্বিতীয় সিরিজ জয়। অবশ্য অধিনায়ক লিটনের তৃতীয় সিরিজ জয়। গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে দেশটিকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল। এরপর টানা দুই সিরিজ হেরে যায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তানের কাছে। শ্রীলঙ্কা সিরিজে পাল্লেকেলেতে প্রথম ম্যাচ হারের পর ডাম্বুলায় ঘুরে দাঁড়ায়। ম্যাচ জিতে সিরিজে ফেরে এবং কলম্বোর রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে জয় তুলে প্রথমবারের মতো সিরিজ নিশ্চিত করে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে মিরপুরে পাকিস্তানকে সর্বনিম্ন ১১০ রানে অলআউট করে ২৭ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের রেকর্ড গড়া জয় পায় লিটন বাহিনী। গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচে দুই পরিবর্তন নিয়ে খেলেন টাইগাররা। তাসকিন আহমেদের জায়গায় শরিফুল ইসলাম এবং তানজিদ তামিমের পরিবর্তে খেলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। দুই পরিবর্তন নিয়ে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেই বিপর্যয়ে পড়েন টাইগাররা। ২৮ রানে হারান ৪ উইকেট। সেখান থেকে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৪৯ বলে ৫৩ রান যোগ করেন শেখ মেহেদি হাসান ও ম্যাচসেরা জাকের আলি অনীক। মেহেদি ৩৩ রান করেন। জাকের খেলেন ৫৫ রানের ইনিংস। ৪৯ থেকে ছক্কা মেরে হাফ সেঞ্চুরি করেন। ৪৬ বলের ইনিংসটিতে তিনি ১টি চার ও ৫টি ছক্কা মারেন। এটা তাঁর ৩৩ ম্যাচ ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি। চাপের মুখে অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে ম্যাচসেরা জাকের বলেন, ‘মিরপুরের উইকেট সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা রয়েছে। সেটা মাথায় রেখেই ব্যাটিং করেছি। আমি যে কোনো পজিশনে ব্যাটিং করতে অভ্যস্ত। দল যখন যেখানে ব্যাটিং করাবে, সেখানেই ব্যাটিং করতে প্রস্তুত।’ জাকেরের হাফ সেঞ্চুরিতে ২০ ওভারে ১৩৩ রান করে বাংলাদেশ। টার্গেট ১৩৪ রান। টি-২০ ক্রিকেটে আহামরি নয়। তার পরও আগের ম্যাচে ১১০ রানে অলআউট পাকিস্তানের জন্য একটু বেশিই ছিল। শোকের দিনে সিরিজ জিততে মরিয়া লিটন বাহিনী ফিল্ডিংয়ে নেমেই আঘাত হানে। মেহেদি ও শরিফুল ৪.৪ ওভারে ১৫ রানের মধ্যে ৫ উইকেট তুলে কোণঠাসা করে ফেলেন সফরকারীদের। ৩০ রানে ৬ এবং ৪৭ রানে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় লিটন বাহিনী। এর মাঝেই ফাহিম আশরাফ ৩২ বলে ৪টি করে চার ও ছক্কায় ৫১ রান করলে ম্যাচ জমে যায়। শেষ ওভারের সমীকরণ দাঁড়ায় বাংলাদেশের প্রয়োজন ১ উইকেট ও পাকিস্তানের ১৩ রান। প্রথম বলে বাউন্ডারি মারেন ড্যানিয়েল আবদুল্লাহ। মুস্তাফিজুর রহমানের পরের বলে আবদুল্লাহ ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন শামীম পাটোয়ারিকে। ৮ রানে ম্যাচ জেতে বাংলাদেশ। ম্যাচ জমে উঠলেও জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন জাকের, ‘একটু টেনশনে পড়েছিলাম। তার পরও আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। ক্লোজ ম্যাচ জেতা কিন্তু ভালো লক্ষণ।’