চতুর্মুখী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, গণতান্ত্রিক, নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা অন্যতম। এসব সংকট উত্তরণে দ্রুতই জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন। নির্বাচিত সরকারের পক্ষে এসব সংকট সমাধান সম্ভব। নির্বাচন না হলে বা দেরি হলে যে সংকট তৈরি হবে, তা কল্পনাও করা যাবে না।
গতকাল রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোর আয়োজিত ‘সংকট উত্তরণে সংসদ নির্বাচন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অর্থনীতিবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, রাজনীতি বিশ্লেষক, রাজনৈতিক নেতা ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘রাষ্ট্র ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। চতুর্মুখী সংকটে আছে। উত্তরণে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়া দরকার। নির্বাচিত সরকার সংকট উত্তরণে কাজ করবে। নির্বাচন না হলে যে সংকট তৈরি হবে, তা ভাবতে পারছি না। এর জন্য রাজনৈতিক সমঝোতাও প্রয়োজন।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারকে জনগণ সাপোর্ট দিয়ে রেখেছে। এখন এ সরকারের উচিত দ্রুত নির্বাচন দেওয়া। নির্বাচন হলে স্থিতিশীলতা আসবে। নির্বাচনের আগে সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার লম্বা প্রক্রিয়া। মৌলিক সংস্কার শেষে দেশের স্বার্থে দ্রুতই নির্বাচন প্রয়োজন।’ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘সবার কাছে রাজনৈতিক সংকট দৃশ্যমান। অর্থনৈতিক সংকট দেখা যাচ্ছে না বলে কথা উঠছে না। অনেকে বলছেন নির্বাচন আগে, না সংস্কার আগে? আমি সংস্কারের পক্ষে। দেশ এগিয়ে নিতে সংস্কার প্রয়োজন। এর জন্য ঐক্য দরকার।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সংকট সৃষ্টি করছে বলে আমার ধারণা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সবশেষ ধাপ হলো নির্বাচন। মানুষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। ২০১৪, ’১৮ ও ’২৪ সালে তারা নির্বাচন করতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত দ্রুত সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেওয়া। নির্বাচন না হলে সংকট আরও বাড়বে।’ গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকার নির্বাচনের সময় দিলেও তা অস্পষ্ট। সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নেই। ফলে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।’
আমার বাংলাদেশ পার্টির সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের শক্তিশালী পজিশন নেই। কেউ বলছেন বিএনপির দ্বারা প্রভাবিত। কেউ বলছেন জামায়াত, কেউ বলছেন এনসিপি দ্বারা প্রভাবিত। নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা দরকার। সমঝোতার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন।’ নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য, রাজনীতি বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘দেশে সংকট চলছে। রাজনীতি ও অর্থনীতি অন্যতম। বিদেশি বিনিয়োগ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ বাড়ানোসহ নানান সংকট রয়েছে। দ্রুত নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র মজবুত করা হোক-এ উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ বলেন, ‘সংকটের মূল কারণ শেখ হাসিনা। নির্বাচনব্যবস্থা, প্রশাসন, পুলিশসহ সবই তাঁর তৈরি। এগুলো সংস্কারে রাজনৈতিক সমঝোতায় আসতে হবে।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি, কালের কণ্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ বলেন, ‘সংকট সমাধানে নির্বাচনি রোডম্যাপ দিতে হবে। স্থিতিশীলতা, বৈষম্য দূর, অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হলে সংকট কেটে যাবে।’
বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মন্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সরকারই সংকট তৈরি করেছে। যারা সরকারের ভুলত্রুটি তুলে ধরবে, সরকার চালাকি করে তাদের বিভিন্ন সংস্কার কমিশনে ঢুকিয়েছে। ১১টি সংস্কার কমিশন ও একটি ঐকমত্য কমিশন করা হয়েছে। এসব কমিশনে কত টাকা খরচ হয়েছে তা বলছে না সরকার।’ তিনি বলেন, ‘সংকট উত্তরণে নির্বাচন প্রয়োজন। সরকার কে গঠন করবে তা জনগণই ঠিক করবে।’
ডেইলি সান সম্পাদক রেজাউল করিম লোটাস বলেন, ‘সংস্কার ও নির্বাচন একই সঙ্গে চলতে পারে। সংস্কার তার মতো করে এগিয়ে যাবে, একই সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়াও। সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। নতুন নতুন ইস্যু নিয়ে সংস্কার ও নির্বাচন দেরি করা হচ্ছে। এ কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।’ বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর.কমের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘কেউ সংস্কার চান, কেউ চান না। সংস্কার করবে নির্বাচিত সরকার। দলগুলো নির্বাচনের মেনিফেস্টোতে তাদের অঙ্গীকার তুলে ধরুক। জনগণ যাকে পছন্দ করবে, তাকে ভোট দেবে। যারা জনগণকে ভয় পায়, তারা নির্বাচন পেছাতে চায়।’