মৃত্যুর আগে বলে যাওয়া শেষ ইচ্ছা (অসিয়ত) অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে আপন বোনের বাড়ির এলাকার কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা মাসুকা বেগম (নিপু)।
মঙ্গলবার বাদ আসর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের সোহাগপুর ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে ওই গ্রামের প্রধান কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
সোমবার বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সময় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ক্লাস নিচ্ছিলেন শিক্ষিকা মাসুকা বেগম। তিনি ওই স্কুলের প্রাইমারি শাখার ইংরেজি মাধ্যমের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষিকা। বিমান দুর্ঘটনায় তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। পরে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
বার্ন ইউনিট থেকে তার মরদেহ গ্রহণ করেন মাসুকার বড় বোন পাঁপড়ি রহমান ও তার স্বামী আশুগঞ্জের ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান।
মাসুকা বেগমের ভগ্নিপতি আশুগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. খলিলুর রহমান জানান, মৃত্যুর আগে হাসপাতালে পাশের বেডে চিকিৎসাধীন আরেক শিক্ষককে মাসুকা তার মৃত্যু হলে যেন তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সোহাগপুরে কবর দেওয়া হয় এ অসিয়ত করে যান। সেই অনুযায়ী তার মরদেহ মঙ্গলবার বিকেল ২টার দিকে তিনিসহ তার স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে নিয়ে আসেন। পরে বাদ আসর আশুগঞ্জের সোহাগপুর ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে ওই গ্রামের প্রধান কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
নিহত শিক্ষিকা মাসুকা বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের চিলোকূট চৌধুরী বাড়ির সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরীর মেয়ে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে মাসুকা সবার ছোট ছিলেন। বেশ কয়েক বছর আগে তার মা মারা গেছেন। আশুগঞ্জের সোহাগপুরে তার আপন বড় বোনের শ্বশুর বাড়ি। মা যাওয়ার পর মাসুকা বড় বোনের নিকটে মাতৃস্নেহে বড় হয়েছেন মাসুকা।
এদিকে, মাসুকার মৃত্যুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চিলোকূট ও আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। শোকে মুহ্যমান তার পিতা ও দুই ভাই বোনসহ স্বজনরা।
মাসুকা বেগম নিপুর কলেজ শিক্ষক অধ্যাপক আবু হানিফা বলেন, মাসুকা বেগম অত্যন্ত মেধাবী ও আল্লাহ ভীরু মেয়ে ছিলেন। তিনি সবসময় পর্দার বিধান মেনে চলতেন।
দেশে এ ধরনের দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/কেএ