অনিরাপদ হয়ে উঠছে দেশের মহাসড়ক। একের পর এক ভয়াবহ ডাকাতি এবং দুর্ঘটনায় চ্যালেঞ্জের মুখে ঈদ নিরাপত্তা। ভয়াবহ তথ্য হলো, ডাকাতের থাবা থেকে বাদ যাচ্ছে না খোদ পুলিশও। ভুক্তভোগীদের রক্ষায় এগিয়ে আসা পুলিশের ওপর হামলে পড়ছে ডাকাতরা। হতাশার খবর হলো, হাইওয়ে পুলিশের করা ১ হাজার ৪৪৬ ডাকাতের তালিকা হলেও গ্রেপ্তারে খুব একটা অগ্রগতি নেই।
গত এক সপ্তাহে পাবনা, টাঙ্গাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকার মহাসড়কে সংঘটিত দুর্ঘটনায় ঝরছে তাজা প্রাণ। তবে হাইওয়ে পুলিশ দাবি করছে, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে টহলে নিয়োজিত গাড়ি এবং পুলিশ সদস্যদের। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২ হাজার ৮৭০ জনবলের সঙ্গে অন্য ইউনিট থেকে হাইওয়েতে যুক্ত করা হয়েছে আরও ৭০০ জন পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশ বলছে, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সরাইল, কুমিল্লার মহাসড়ক চান্দাইল, নারায়ণগঞ্জের সিমরাইল, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। জাতীয়, আঞ্চলিক এবং জেলা মহাসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ২১ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে ৩ হাজার ৯৯১ কিলোমিটারের দায়িত্ব পালন করছে হাইওয়ে পুলিশ। মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে দেশের আটটি মহাসড়কের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৫০ কিলোমিটারে ১ হাজার ৪২৭টি অত্যাধুনিক ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এবার মহাসড়কেই বসছে ২৩০টি পশুর হাট। এর মধ্যে ৪৫টি বড় হাট। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে দেশের আটটি মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় ১৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪১ জনকে।
তবে গত শুক্রবার গভীর রাতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রবাসী নারীকে বহন করা একটি মাইক্রোবাসে এক ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ডাকাতরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় হাইওয়ে পুলিশের রেকার হেলপার গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তবে গা শিউরে ওঠা বিষয় হলো, ডাকাতের কবল থেকে বাদ যাচ্ছে না লাশবাহী গাড়িও। গত বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের বুড়িশ্বরের তিলপাড়া এলাকায় লাশবাহী একটি গাড়িতে ডাকাতদের হামলায় নারীসহ নয়জন আহত হয়েছেন। গত শনিবার হবিগঞ্জের-বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে রাত ১টার দিকে পুলিশের টহল গাড়িকে জিম্মি করে তিনটি গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন মিঞা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হাইওয়ের নিরাপত্তায় আমরা র্যাব, জেলা পুলিশ এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা নিচ্ছি। সমন্বিতভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। হাইওয়ের নিরাপত্তায় আরও ৬ হাজার পুলিশ সদস্যের প্রস্তাব বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। এর অনুমোদন হলে তখন আরও দুটি রেঞ্জ বাড়বে। ১০টি সার্কেল বেড়ে হবে ৪০টি সার্কেল। ‘এ’ ক্যাটাগরির থানায় ৬০ জন, ‘বি’ ক্যাটাগরির থানায় ৫৫ জন এবং ‘সি’ ক্যাটাগরির থানায় ৪৫ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। একই সঙ্গে বাড়বে যানবাহনের সংখ্যা।
গত বুধবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের খালকুলা টহলরত পুলিশের ওপর ডাকাতের হামলায় দুই উপপরিদর্শক (এসআই) আহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে রাত সাড়ে ১১টা থেকে বুধবার ভোর ৫টা পর্যন্ত একটি যাত্রীবাহী বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাকাত দল যাত্রীদের সবকিছু লুটে নেয়। লুটপাটের সময় নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটে।
জানা গেছে, বাংলাদেশে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে প্রায় ২০০-৩০০টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্পট চিহ্নিত রয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) তথ্যানুযায়ী, দেশের প্রায় ৭০টি মহাসড়কে প্রায় ২৮৬টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। গতকাল বেলা দেড়টায় রাজবাড়ীর পাংশায় সড়কের ট্রাক উল্টে মারা গেছে দুই ব্যবসায়ী ও দুটি গরু। এর বাইরে প্রায়ই দেশের নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকার মহাসড়কে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। অতিবৃষ্টির কারণে মহাসড়কের অনেক স্থানে মাটি সরে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা।
তালিকা করেই শেষ : গত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চে সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পর ১ হাজার ৪৪৬ জন ডাকাতের একটি তালিকা তৈরি করে পুলিশ। কিন্তু এই তালিকার মাত্র কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছে। এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান দেলোয়ার হোসেন মিঞা বলেন, আমরা যে তালিকা করেছিলাম সেটি থানা পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এটা জেনে বলতে হবে।