বর্ষা আসতেই সারা দেশে ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং কভিড-১৯ এর নতুন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। কভিডের নতুন ভ্যারিয়েন্টে সাধারণ ফ্লু ও কভিড একসঙ্গে সংক্রমিত হচ্ছে, যা বর্তমানে ‘ফ্লুরোনা’ নামে পরিচিত। এতে করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল, যেমন-ডায়াবেটিস, স্থুলতা, ক্যানসার বা কিডনি রোগে আক্রান্ত তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া বর্তমানে ১৬-২৫ বছর বয়সি তরুণদের মধ্যেও ডেঙ্গু সংক্রমণের হার বাড়ছে, যা আগে তুলনামূলক কম ছিল। এ অবস্থায় চিকিৎসা খাতে প্রশিক্ষণ, অবকাঠামো ও জনসচেতনতা না বাড়ালে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে (বিএমইউ) অনুষ্ঠিত ‘কনটিনিউইং মেডিকেল এডুকেশন’ (সিএমই) শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সভায় দেশের চলমান ভাইরাস জ্বরের পরিস্থিতি নিয়ে বিশদ আলোচনা ও পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন খান। এ সময় তিনি জানান, দেশে এই মুহূর্তে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ হচ্ছে বরিশাল ও বরগুনা জেলায়। চলতি মাসে ১ হাজার ৮৭৭ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শুধু এ সপ্তাহেই বরিশালে পাঁচজন ও ঢাকায় দুজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। রোগের ধরন বিষয়ে তিনি জানান, চলতি সময়ের ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেন-১, ডেন-২ এবং ডেন-৩ সেরোটাইপ সক্রিয় পাওয়া গেছে। আগে এটি ঢাকাকেন্দ্রিক থাকলেও এখন সারা দেশেই ডেঙ্গুর বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, মশা নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এই ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। চিকুনগুনিয়া প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন খান জানান, ২০১৭ সালের পর দেশে আবারও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ২০২৪ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২২ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ৫২০ জন সন্দেহভাজন রোগীর মধ্যে ১৬১ জন চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে মৃত্যুর হার কম হলেও, রোগের পরে গিটে ব্যথা, র্যাশ, দুর্বলতা এমন উপসর্গ দীর্ঘমেয়াদে রোগীর জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কভিড-১৯ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন খান জানান, ২০২০ সালের মহামারি হিসেবে পরিচিত কভিড-১৯-এর সংক্রমণ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে নতুন রূপে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে সম্প্রতি ওমিক্রনের জেএন.১ সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি ও এক্সএফসি শনাক্ত হয়েছে।
এই ভ্যারিয়েন্ট দুটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘ভ্যারিয়েন্ট অব মনিটরিং’ তালিকায় থাকলেও ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন নয়। তিনি আরও জানান, যারা তিন ডোজ টিকা নিয়েছেন, তারা তীব্র কভিডের ঝুঁকি থেকে অনেকটাই সুরক্ষিত।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। সভাপতিত্ব করেন উপউপাচার্য (প্রশাসন) ও ইন্টারন্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন উপউপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, শিক্ষক ও চিকিৎসকরা।