সচিবালয়ে কর্মচারীদের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনায় তিন কর্মকর্তা ও তিন কর্মচারীসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। গুরুতর একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সচিবালয়ের ক্যান্টিন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। আহতদের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, বাংলাদেশ সচিবালয় বহুমুখী সমবায় সমিতি থেকে সচিবালয়ের সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি নুরুল ইসলামসহ ১০ জনকে ক্যান্টিনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। (আগে) এটির দায়িত্ব সচিবালয় সমবায় সমিতির কাছে ছিল। এর মধ্যে সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমাদেরকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেও কমিটির সাবেক সভাপতি মাইনুল আমাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি। আমরা ক্যান্টিন বুঝে নিতে কাজ শুরু করি এবং বাজার করে নিয়ে আসার পর হঠাৎ করে সচিবালয়ের সংযুক্ত পরিষদের অপর একটি গ্রুপের সভাপতি দাবি করা বাদিউলের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ জন লাঠি ও রড নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। মারামারির এ ঘটনা মঙ্গলবার রাতে হলেও গতকাল অফিসে এসে জানতে পারেন অন্য সহকর্মীরা। গতকাল ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, সচিবালয় থেকে আহত অবস্থায় ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে একজনকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি পাঁচজন চিকিৎসা শেষে চলে গেছেন। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, সচিবালয়ের ৪ নম্বর ভবনের পেছনের পদ্মা ক্যান্টিনের সামনে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কর্মচারীদের পরিচালিত দুটি ক্যান্টিন ও অন্যান্য দোকান বন্ধ। ঘটনার পর সচিবালয়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জানা যায়, বাংলাদেশ সচিবালয় বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড সচিবালয়ে দুটি ক্যান্টিন এবং ওএমএসের দোকান পরিচালনা করে। সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের দুটি অংশের মধ্যে একটি অংশের নেতৃত্ব দেন মো. বাদিউল কবীর ও নিজাম উদ্দিন আহমেদ, আরেক অংশের নেতৃত্ব রয়েছেন মো. নুরুল ইসলাম ও মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কর্মচারী সংগঠনের একটি পক্ষ ক্যান্টিন দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সমবায় সমিতি তাদের নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ছিল। কিন্তু আগের কমিটির (সমবায় সমিতি) নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি সমবায় অধিদপ্তরের নজরে আনা হলে, তারা সমবায় সমিতি পরিচালনায় অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে দেয়। তবে আগের কমিটি দায়িত্ব হস্তান্তরে টালবাহানা করছিল। তারা এ বিষয়ে আদালতে রিটও করে। তবে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে সম্পাদক মাইনুল দায়িত্ব হস্তান্তরও করেছিলেন। কিন্তু সভাপতি বাদিউল করেননি। কর্মচারীরা জানিয়েছেন, রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির কার্যক্রমের বিষয়ে স্থগিতাদেশ দেন। এতে আদালতের এ রায়কে কেন্দ্র করে সমবায়ের আগের কমিটি ও সংযুক্ত পরিষদের বাদিউল গ্রুপ মিলে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির নুরুল ইসলাম গ্রুপের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে। এ হামলায় আহতরা হলেন- বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম (৫৮), কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওবায়দুল ইসলাম রবি (৪৫), আইন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিলন (৪০), ক্যাবিনেটের অফিস সহকারী মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম (৫০), আইন মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী হাসনাত (৪৫) ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কম্পিউটার অপারেটর জাকির হোসেন (৪৫)।