অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্তসংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা প্রশ্নে রুলের ওপর ফের শুনানি শুরু হয়েছে। গতকাল বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায়চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির। পরে আজ পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন আদালত। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটির আগে ২২ মে শুনানি হয়।
এদিকে গতকাল শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের কেউ উপস্থিত না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন হাই কোর্ট। আদালত বলেছেন, এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিত। হাই কোর্ট বলেন, এ রুল শুনানির জন্য তিনটি কোর্টে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আমরা সবকিছু বন্ধ রেখে এমন গুরুত্বপূর্ণ শুনানির জন্য বসলাম, আর রাষ্ট্রপক্ষ আসবে না! তা কী করে হয়।
গত বছরের ২৫ আগস্ট সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ, ২০১৭ সালের জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচার বিভাগীয় পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাত আইনজীবী রিটটি করেন। পরে ২৭ অক্টোবর হাই কোর্ট রুল জারি করেন। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারকর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরসহ) ও শৃঙ্খলাবিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি তা প্রয়োগ করে থাকেন। রিটকারীদের আইনজীবীর মতে রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত এ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের সরাসরি হস্তক্ষেপ দেখা যায়, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করে।
১৯৭২ সালের সংবিধানে অধস্তন আদালতে দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ শৃঙ্খলাবিধানের এ দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত ছিল। ১৯৭৪ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত করা হয়। পরে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করার বিষয়টি যুক্ত করা হয়। এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পঞ্চম সংশোধনী আইন অসাংবিধানিক মর্মে ঘোষণা করলে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন, ২০১১-এর মাধ্যমে ১১৬ অনুচ্ছেদের বর্তমান একই বিধানটি প্রতিস্থাপন করা হয়। বর্তমানে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে এ বিধানটিই বিদ্যমান রয়েছে।