বিচার বিভাগ পৃথক্করণ ও বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি-সংক্রান্ত ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী রবিবার দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আদেশের জন্য এ দিন ধার্য করেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
শুনানিকালে আইনজীবী শিশির মনির আদালতকে বলেন, ‘অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি ও বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ মামলার রায়কে কেন্দ্র করেই সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে অসুস্থ বানিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। তাঁকে দেশের বাইরে পাঠানোর পর হেবিয়াস কপার্স মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তখন আমার সিনিয়র মরহুম অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আমাদের প্রধান বিচারপতি কোথায়? তার জবাব ওই সময়ের রাষ্ট্রপক্ষ দিতে পারেনি। বিচারপতি সিনহাকে সরিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার আদালতকে ব্যবহার করে তাদের মনের মতো করে বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়ন করেছিল। বিচারপতি সিনহা তাঁর ব্রোকেন ড্রিম বইতে সব ঘটনা তুলে ধরেছেন।’ আইনজীবী শিশির মনির আরও বলেন, মাসদার হোসেন মামলার নির্দেশনা বাস্তবায়নের মধ্যেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিহিত।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ প্রদত্ত রায়ের মাধ্যমে দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকদের সিভিল সার্ভিসের সদস্য হিসেবে গণ্য না করে একটি পৃথক সার্ভিস হিসেবে বিবেচনা করে এ দেশে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের দ্বার উন্মোচিত হয়। মাসদার হোসেন মামলার রায় ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর ঘোষিত হলেও পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারগুলো ওই রায় বাস্তবায়ন করেনি।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের লক্ষ্যে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন এবং জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে পৃথক জুডিসিয়াল সার্ভিস গঠন করে। বর্তমান প্রধান বিচারপতি গত ২১ সেপ্টেম্বর দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকদের প্রতি অভিভাষণ প্রদানকালে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠাসহ বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পরিপূর্ণ রূপরেখা তুলে ধরেন।