ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেনাকাটা শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। এক মাসের মধ্যে ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা চূড়ান্ত করা; ভোটার হালনাগাদের খসড়া প্রকাশ ১০ আগস্ট; ৩১ আগস্ট হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ। এ ছাড়া ভোটের এক মাস আগে সম্পূরক আরেকটি ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে ইসি। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
তিনি বলেছেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেনাকাটা শেষ হয়ে যাবে। এরপরও কিছু কাজ থাকবে, যেগুলো সম্পর্কে তখন পর্যালোচনা করে বলা যাবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ভোটের সম্ভাব্য সময়ের বিষয়ে ঘোষণা দিতে পারেন। এর মধ্যে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানাতে গতকাল নির্বাচন ভবনে ব্রিফিংয়ে আসেন ইসি সচিব আখতার।
তফসিল কবে নাগাদ হতে পারে-এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব আখতার বলেন, তফসিল ঘোষণার ব্যাপারটা একান্তভাবে নির্বাচন কমিশনের ওপর। যখনই ইসি সিদ্ধান্ত নেবে আমরা জানাব।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে আখতার আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে টাইমলাইন দিয়েছেন, সে অনুযায়ী কাজ করছি। আমরা আমাদের প্রস্তুতি জানাচ্ছি। নির্বাচন কমিশন যেসব সিদ্ধান্ত নেন তা তুলে ধরা হচ্ছে।
দলের নিরীক্ষা প্রতিবেদন : নিবন্ধিত ৫১টি দলের মধ্যে ৩০টি গত ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ১৫টি দল সময় বাড়াতে আবেদন করেছে। ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, বাকি ছয়টি দলের মধ্যে পাঁচটি প্রতিবেদন দেয়নি। একটি এ বছর নিবন্ধন পাওয়ায় সেটি এবার প্রতিবেদন দেয়নি।
দল নিবন্ধন : ১৪৫টি দল নিবন্ধন আবেদন করেছে। তথ্য ঘাটতি চেয়ে চিঠি দেওয়ার পর ৩ আগস্টের মধ্যে এর মধ্যে ৮০টি দল প্রয়োজনীয় নথি দিয়েছে। সময় বাড়াতে আবেদন করেছে ছয়টি দল। ৫৯টি দল কোনো জবাব দেয়নি।
ভোটার তালিকা : ইসি সচিব জানান, বছরের শুরুতে ২ মার্চ হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ১০ আগস্ট বাদ পড়া সাড়ে ৪৪ লাখের মতো ভোটারের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং মৃত ভোটারদের বাদ দেওয়া হবে। দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি করে ৩১ আগস্টের মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান ইসি আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, এবার তিনটি তালিকা হচ্ছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী সবশেষ ভোটের এক মাস আগে সম্পূরক তালিকা প্রকাশ করা হবে; যাতে নতুন ভোটাররা যুক্ত হবেন।
সীমানা নির্ধারণ : ইতোমধ্যে ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানার খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। ১০ আগস্টের মধ্যে দাবি-আপত্তি জানানোর সময় রয়েছে। এরপর শুনানি শেষে আগস্টের মধ্যেই সীমানা চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আইনবিধি সংস্কার : ইতোমধ্যে সীমানা আইন সংশোধন অধ্যাদেশ, ভোটার তালিকা সংশোধন অধ্যাদেশ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা, স্থানীয় পর্যবেক্ষক নীতিমালা, বিদেশি পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যম নীতিমালা, পর্যবেক্ষক সংস্থা নীতিমালা জারি ও আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। ইসি সচিব সচিব আখতার আহমেদ জানান, আগামী বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সভা রয়েছে। এতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হবে। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা চূড়ান্ত হতে পারে। তিনি বলেন, আরও তিনটি আইনবিধি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ উইংয়ে ভেটিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান সংশোধন ও ইসি সচিবালয় আইন সংশোধন ভেটিং শেষে উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হবে। আচরণবিধিতে এআই অপব্যবহার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা রোধেও কারিগরি ও বিধিতে যুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নির্বাচনি সরঞ্জাম ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স : ভোটের জন্য সব ধরনের নির্বাচনসামগ্রী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেনাকাটা শেষ করা হবে।
প্রবাসী ভোট : অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটদান সংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে। এতে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে। সচিব আখতার জানান, শিগগিরই পরিকল্পনা কমিশনের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পাওয়া যাবে। নিবন্ধনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার কাজ চলমান রয়েছে।
ইইউ টিম আসছে সেপ্টেম্বরে : ইউরোপীয় ইউনিয়নের অগ্রবর্তী পর্যবেক্ষক দল নির্বাচনের প্রাক-পরিবেশ দেখতে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বাংলাদেশে আসছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে সাতজনের এ দলের আসার কথা রবিবার।