হাজারো পাখির নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছে বগুড়ার ধুনট উপজেলার যমুনার পাড়ে মাধবডাঙ্গা গ্রামের রবিউল হাসানের বাড়ি। বাড়িটি এরই মধ্যে পরিচিতি পেয়েছে পাখিবাড়ি নামে। কিন্তু রবিউল হাসানের কাছে এটি শুধুই একটি বসতভিটা নয়, এটি যেন প্রকৃতির সঙ্গে করা নীরব চুক্তি।
জানা যায়, বগুড়ার ধুনট উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে মাধবডাঙ্গা গ্রাম। এ গ্রামে বসবাস করেন রবিউল হাসান নামের এক যুবক। দুই যুগ আগে তার বাড়িতে প্রথমে উড়ে আসে একঝাঁক পাখি। ওই দিন বিকাল বেলা চৈত্রের আলোর শেষ ছায়ায় একটি তেঁতুল গাছে বসে তারা। এরপর বাঁধে বাসা। তখন কেউ ভাবেনি এটি ছিল এক দীর্ঘ বসবাসের সূচনা। এরা প্রতি বছর গ্রীষ্মের শুরুতে সদলবলে এসে গাছের মগডালে বাসা বাঁধে। সেখানে বাচ্চা ফোটায়। এরপর বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত পেরিয়ে শীত এলেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
পাখিবাড়িটি আয়তনে প্রায় ৪ একর। সামনের অংশজুড়ে রয়েছে দুটি বড় পুকুর। পাড় ঘিরে রয়েছে মেহগনি, কড়ই, জাম, তেঁতুল, আম, কাঁঠালসহ নানা প্রজাতির দেশি গাছ। পেছনে বিস্তৃত ঘন বাঁশঝাড়। এই বাগানই এখন পরিণত হয়েছে হাজারো পাখির আশ্রয়স্থল। প্রতিদিন ভোরবেলা তারা একসঙ্গে উড়ে যায় খাবারের সন্ধানে ধান খেত, নদীর পাড়, খোলা মাঠে। দুপুর পেরোলে আবার ফিরতে শুরু করে নীড়ে। সূর্য ঢলে পড়লে চারপাশ মুখরিত হয় তাদের ডাকে। জায়গাটি এখন শুধু একটি প্রাকৃতিক নিদর্শন নয়, এটি হয়ে উঠেছে পরিবেশ সচেতনতার প্রতীক। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এখানে আসে প্রকৃতি নিয়ে প্রকল্প তৈরি করতে। কেউ ছবি আঁকে, কেউ কবিতা লেখে। এই বাড়ি যেন জীবন্ত পরিবেশ শিক্ষা কেন্দ্র। যমুনার ভাঙন পাড়ের এই গ্রামে মানুষ আর পাখি, প্রকৃতি আর মমতা মিলেমিশে গেছে।
ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন তালুকদার জানান, আমরা পাখিবাড়িকে বিশেষ নজরে রেখেছি। কেউ শিকার করতে এলে পুলিশে খবর দিতে বলেছি। এ বাড়ির গুরুত্ব শুধু ধুনট নয়, পুরো জেলাতেই ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে পাখিদের বিরক্ত করা নিষিদ্ধ। পাখিদের এ বাসস্থান দেখতে আসেন অনেকে। কেউ আসেন ছবি তুলতে, কেউ প্রকৃতিকে অনুভব করতে। কেউবা শুধুই দাঁড়িয়ে থাকেন, পাখিদের সান্নিধ্য নিতে।