দেশের বিভিন স্থানে ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ডের খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি বজ্রপাতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে, কুমিল্লায় বজ্রপাতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও দুই বোন, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে শিশু শিক্ষার্থীসহ দুজন, বগুড়ায় নারী, নারায়ণগঞ্জে স্কুলছাত্র ও নওগাঁ গাইবান্ধা ও ঝিনাইদহে চার কৃষকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া লালমনিরহাটে নীলফামারীতে ও রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ঘূর্ণিঝড়ে সহস্রাধিক ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এদিকে, বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে তিস্তার পানি প্রবাহিত হওয়ার ঘটনায় নিরাপদ স্থানে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য।
কুমিল্লা : জেলার হোমনায় খেয়াঘাটে বজ্রপাতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ও দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া দুজন আহত হয়েছেন। উপজেলার ঘাগুটিয়া ইউনিয়নের ভবানীপুর খেয়াঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন খোদেদাউদপুর গ্রামের রাহিনুর ইসলামের ছেলে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম (২৩), নালা দক্ষিণ গ্রামের মতিউর রহমানের মেয়ে মমতাজ বেগম (৩৭) ও জাকিয়া সুলতানা (২৩)। আহত অটোরিকশাচালক ছামাদ মিয়া ও বাবুল মিয়াকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, তিনজন ভবানীপুর ঘাটে খেয়া পার হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই মমতাজ বেগম ও জাকিয়া সুলতানা মারা যান। গুরুতর আহতাবস্থায় রাশেদুল ইসলামকে হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘাগুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম গনি জানান, নিহতদের মধ্যে মেয়ে দুজন নালা দক্ষিণ গ্রামের এবং ছেলেটি খোদেদাউদপুর গ্রামের। ছেলেটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে বজ্রপাতে মাদরাসার এক শিশু শিক্ষার্থীসহ দুজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বিকালে উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের কালিকাপুর এলাকায় নুরানি মাদরাসা থেকে ফেরার পথে বৃষ্টিসহ বজ্রপাতে মোহাম্মদ বাবলু মিয়া নামে এক শিশু ঘটনাস্থলেই মারা যায়। বাবলু ওই এলাকার নূর হোসেনের ছেলে। অপরদিকে, উপজেলার বামনডাঙা ইউনিয়নের চর লুচনী গ্রামে বজ্রপাতে সহিবর নামে একজনের মৃত্যু ঘটেছে। এ ছাড়া দুপুরের দিকে বাড়ির পাশে ঘাস কাটতে গেলে বজ্রপাতে সহিবর গুরুতর আহত হন। নাগেশ্বরী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। নওগাঁ : নওগাঁর রানীনগরে মাঠে গরু চরানোর সময় বজ্রপাতে তাহের আলী (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। সকালে উপজেলার ছোট যমুনা নদীর তীরে কৃষ্ণপুর মাঠ এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। গাইবান্ধা : জেলার সাঘাটায় বজ্রপাতে আবদুল আজিজ (৪৪) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আবদুল আজিজ উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দীঘলকান্দী গ্রামের আলহাজ মকবুল হোসেনের ছেলে। ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ সদর ও শৈলকুপা উপেজলায় বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, ঝিনাইদহ উপজেলার ১৭ নম্বর ইউনিয়নের আড়মুখীর বড় বাড়ি গ্রামের কৃষক শিমুল (৩৫) ও শৈলকুপার ১২ নম্বর নিত্যান্দনপুর ইউনিয়নের শেখরা গ্রামে আরেক কৃষক হুরমত (৫৫)। নারায়ণগঞ্জ : আড়াইহাজারে কালাপাহাড়িয়া এলাকায় বজ্রপাতে ওয়াসিম (১৩) নামে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। বগুড়া : বগুড়ার গাবতলীতে বজ্রপাতে শেফালী বেগম (৫৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। লালমনিরহাট : জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের আকস্মিক ঝড় বৃষ্টিতে শতাধিক কাঁচা পাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ঝড়ের কবলে টিনের ঘর, বিভিন্ন গাছপালা ভেঙে পড়েছে। ঝড়ে টিনের আঘাতে আহত বাদশা মিয়া (৪০), মামুদ মিয়া (৭০) ও শহিদুল ইসলামকে (৪৬) কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
নীলফামারী : কিশোরগঞ্জ উপজেলায় গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের ৫টি ওয়ার্ডের ১১টি পাড়ায় ঘুর্ণিঝড়ে পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ৫০ জন। ঘর চাপা পড়ে অন্তত ৮টি গরু মারা গেছে।
রংপুর : জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলায় মাত্র দুই মিনিট স্থায়ী এক ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে আলমবিদিতর ও নোহালী ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের দুই শতাধিক ঘর-বাড়ি।
বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি : লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, উজানে পাহাড়ি ঢল আর কয়েক দিনের ভারী বর্ষণের ফলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বাম তীরের জেলা লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চলে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৫ মিটার। যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২.১৫ মিটার) ১০ সেন্টিমিটার ওপরে। তিস্তার পানি বিপৎসীমায় তাই রেড অ্যালার্ট জারি করে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে যেতে মাইকিং করেছে পাউবো।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত দুই দিনের ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। আজ সকাল থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে ৭০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। বেলা ৩টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে; যা ক্রমেই বাড়ছে। ফলে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে মৎস্য খামার, আমন ধানসহ নানান জাতের সবজির খেত। ডুবে গেছে চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট। নৌকায় যোগাযোগ করছে চরাঞ্চলের মানুষ।