দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনোভাবেই স্বাভাবিক হচ্ছে না। বরং খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ ক্রমেই পরিস্থিতিকে আরো ভীতিকর করে তুলছে। তথ্য-উপাত্ত বলছে, শহর-নগর, বন্দর-গ্রাম সর্বত্র হত্যা, চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ ইত্যাদি অপরাধ বেড়েছে। এর সঙ্গে থেমে নেই চাঁদাবাজিও।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান মতে, চলতি বছরে (জানুয়ারি-আগস্ট) এই আট মাসের হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে ৫৪০টি মামলা হয়েছে। এর আগের বছর প্রতি মাসে গড়ে মামলা হয়েছিল ৪৪৫টি। আগের বছরের চেয়ে চলতি বছর প্রতি মাসে গড়ে হত্যা, ডাকাতি, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণের জেরে ৯৫টি মামলা বেশি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আশা করা হয়েছিল, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
হত্যা, সন্ত্রাস, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও চাঁদাবাজি কমবে। কিন্তু পরিস্থিতি ভালো হওয়ার চেয়ে বরং খারাপ হয়েছে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও পুলিশের মনোবলে ঘাটতিসহ নানা কারণে এর উন্নতি হয়নি। সরকারের ১৩ মাস পরও আইন-শৃঙ্খলার সন্তোষজনক উন্নতি না হওয়ায় জনমনে নিরাপত্তাহীনতা ভীতির সঞ্চার হচ্ছে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, বেকারত্ব, মাদকাসক্তি ও সামাজিক বৈষম্যের কারণে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। এ ছাড়া বর্তমানে দেশের অস্থিতিশীল রাজনীতিও এসব অপরাধে কোনো না কোনোভাবে প্রভাব ফেলছে। এসব সমস্যার সমাধান না হলে শুধু পুলিশি পদক্ষেপে অপরাধ কমানো সম্ভব হবে না।
অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, অপরাধ যেভাবে বাড়ছে তা নিয়ন্ত্রণ করে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া জরুরি। মানুষ ভালো নেই। তবে শুধু পুলিশি অভিযান নয়, সামাজিক সচেতনতা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা গেলে অপরাধের হার কমানো সম্ভব।’
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যানও অপরাধ বাড়ার সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। সংস্থার তথ্য মতে, চলতি বছর (জানুয়ারি-আগস্ট) এই আট মাসে সারা দেশে সবচেয়ে বেশি হত্যা, দস্যুতার ঘটনায় চার হাজার ৩১৬টি মামলা হয়েছে। সে হিসাবে গড়ে প্রতি মাসে ৫৪০টি মামলা হয়েছে। মোট মামলার মধ্যে ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা এক হাজার ৭০২টি এবং দুই হাজার ৬১৪টি খুনের মামলা। এর আগের বছর ২০২৪ সালে ১২ মাসে ডাকাতি-দস্যুতা ও হত্যার ঘটনায় মোট পাঁচ হাজার ৩৩৪টি মামলা হয়েছে। সে বছর প্রতি মাসে গড়ে মামলা হয়েছে ৪৪৫টি। এর মধ্যে ডাকাতি-দস্যুতায় এক হাজার ৯০২টি ও খুনের মামলা তিন হাজার ৪৩২টি। এই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর প্রতি মাসে গড়ে ডাকাতি-দস্যুতা ও খুনের ঘটনায় ৯৫টি বেশি মামলা হয়েছে। এর আগের বছর ২০২৩ সালের সঙ্গে তুলনা করলে চলতি বছরের প্রতি মাসে গড়ে ১৬০টি মামলা বেড়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন পুলিশ পরিসংখ্যানে কখনো এসব ঘটনার প্রকৃত তথ্য উঠে আসে না, বাস্তবে এসব অপরাধ আরো বেশি ঘটছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
এর আগের বছরে (২০২৩ সালের আগস্ট থেকে গত বছরের জুলাই পর্যন্ত) সারা দেশে ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা হয়েছে এক হাজার ৬১৯টি। এই সময় মাসে গড়ে মামলা হয়েছে ১৩৫টি।
পুলিশ সদর দপ্তরের এই হিসাবে আগের বছরের চেয়ে পরের বছরে ৮৩৮টি মামলা বেশি হয়েছে। এ সময় মাসে ৭০টি মামলা বেশি হয়েছে।
আবার পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধবিষয়ক মাসিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১৩ মাসে সারা দেশে সাত ধরনের অপরাধমূলক ঘটনায় ৩৯ হাজার ৯৩৬টি মামলা হয়েছে। এই হিসাবে প্রতি মাসে মামলা তিন হাজার ৭২টি। প্রতিদিন মামলা ১০২টি।
এসব মামলা ও অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, হত্যার পাশাপাশি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় করা মামলা অন্যান্য মামলার চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি। চাঁদাবাজির অভিযোগও অনেক বেশি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সারা দেশে ক্রমবর্ধমান ডাকাতি, দস্যুতা, হত্যাকাণ্ড এমনকি মব সন্ত্রাসের ঘটনা বেড়েই চলেছে। ফলে উদ্বেগ বেড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। দেশজুড়ে এভাবে অপরাধের মাত্রা বাড়তে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন ও নাগরিক সমাজ। তারা বলছে, অপরাধ দমন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা আরো হুমকির মুখে পড়বে।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কোনো অপরাধেরই লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না। দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে মানুষকে হত্যা করতে দ্বিধা করছে না।
তবে অপরাধ দমন নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, যেকোনো ঘটনায় জড়িত চক্রকে চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে। পুলিশের সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান চালাচ্ছি।’ অন্যদিকে সাধারণ মানুষ বলছে, অপরাধীরা ধরা পড়লেও শাস্তি না হওয়ায় তারা পুনরায় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে আইনের শাসন ও বিচার প্রক্রিয়ার দুর্বলতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
বেপরোয়া চাঁদাবাজি : চাঁদাবাজদের হামলায় আহত নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হামলাকারীরা লাঠি ও রড দিয়ে তাঁকেসহ পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। জেলার পুলিশ সুপার মিনহাজুল আলম বলেন, ‘পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সাতজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অন্যদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে।’
শুধু পুলিশের ওপর হামলাই নয়, ৫ আগস্ট-পরবর্তী রাজধানীসহ দেশের ৬৪ জেলায় নীরবে ও প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চলছে। এমনকি দেশে পণ্য পরিবহনেও চাঁদাবাজি চলছে। সম্প্রতি কাছে নওগাঁ থেকে মালপত্র ট্রাকে লোড করার পর কয়েক ধাপে চাঁদা দিতে হয় বলে জানান রুহুল আমিন নামে এক ট্রাকচালক। সারা দেশে আমাদের প্রতিনিধিরা ভুক্তভোগী অন্তত শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন দেশে নীরবে চাঁদাবাজি চলছে।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ চাঁদাবাজদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। অনেকে ভয়ে মুখ ফুটে পুলিশের কাছেও অভিযোগ করতে পারছেন না। আবার অভিযোগ করলেই প্রাণ হারাতে হচ্ছে অপরাধীদের হাতে। ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়ে মব সৃষ্টি করেও চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। গত ২৭ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানে সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদার বাকি অংশ নিতে আসা তরুণরা পুলিশি ফাঁদে ধরা পড়েন। সমন্বয়ক পরিচয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্র সমন্বয়ক মো. আসাদুর রহমান আকাশ তাঁর দুই সহযোগী ফরিদ উদ্দিন ও রবিনকে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী।
যৌথ বাহিনী সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃত সন্ত্রাসীচক্রের প্রধান আসাদুর রহমান আকাশসহ তাঁর সহযোগীরা জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন বেআইনি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি তাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মব সৃষ্টি এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া তাঁরা বিভিন্ন মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে বিপুল পরিমাণ চাঁদা আদায় ও মামলা বাণিজ্য করে আসছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির মাধ্যমে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এর বাইরেও চাঁদাবাজির ঘটনায় নতুন নতুন তথ্য বের হয়ে আসছে। আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, নরসিংদী, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলায় অনেক ক্ষেত্রে চাঁদা না পেয়েও হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। চাঁদাবাজির প্রতিবাদে ভুক্তভোগীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছেন বিভিন্ন স্থানে। সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে শুরু করে সাভার, ঝিনাইদহ, মিরসরাই, ময়মনসিংহ, আশুলিয়া—এমনকি চট্টগ্রাম পর্যন্ত চাঁদাবাজিবিরোধী আন্দোলনে মানুষ রাস্তায় নেমেছে। অনেক এলাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি নাজুক।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদর দপ্তরে জরুরি বৈঠক : বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ সদর দপ্তর চাঁদাজদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নিতে সারা রদশে পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দিয়েছে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চাঁদাবাজদের ভয়ে কেউ মামলা করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চাঁদার টাকাসহ হাতেনাতে রশিদ ও অন্য আলামতসহ ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হবে। পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক বৈঠকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় জানিয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ভার্চুয়ালি বৈঠকে দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার, মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ সব রেঞ্জের ডিআইজিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেন।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, চাঁদাবাজির পাশাপাশি সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অভিযান চলছে। অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় আনতে দল-মতের দিকে তাকাবেন না তাঁরা। জেলা পর্যায়ে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে ‘ডিটেনশন’ দিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দপ্তরে নেওয়া হবে।
৫ আগস্টের পর দেশে চাঁদাবাজি বেড়েছে : অর্থ উপদেষ্টা : মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অর্থ মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর দেশে চাঁদাবাজি বেড়েছে। ‘অন্তর্বর্তী সরকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি এবং রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ছাড়া, রাজনৈতিক সরকার ছাড়া চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।’
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আগে যেখানে এক টাকা চাঁদা নেওয়া হতো, এখন দেড় টাকা, দুই টাকা নেওয়া হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর নানা পক্ষ চাঁদাবাজিতে জড়িয়েছে এবং আগে যারা ছিল, তারাও চাঁদাবাজির পেছনে আছে। যারা চাঁদাবাজি করে তারাই আবার ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘চাঁদাবাজির কারণে পণ্যমূল্য বাড়ছে। কিন্তু এটা থামানো আমার মন্ত্রণালয়ের কাজ না।
গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানে এক আলোচনাসভায় জাতীয় পার্টি (একাংশ) চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, দেশে বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সব মানুষের মধ্যে অস্থিরতা চলছে।
সব অপরাধ বাড়ছে : শুধু চাঁদাবাজিই নয়, হত্যাসহ অন্যান্য অপরাধও বেড়েই চেলেছে। গত শুক্রবার বাগেরহাট শহরে প্রকাশ্যে রাতে হায়াত উদ্দিন নামের এক সাংবাদিক খুনকে করা হয়। গত রবিবার রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে প্রাইভেট কার থামিয়ে দুজনকে কুপিয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। গত ২ অক্টোবর রাতে গাজীপুরের ধীরাশ্রমে মো. আব্দুল সোবহানের বাড়িতে সংঘবদ্ধ ডাকাতদল প্রবেশ করে পরিবারের সদস্যদের বেঁধে রেখে মালপত্র লুটপাট শুরু করে।
সাম্প্রতিক অপরাধমূলক অন্যান্য ঘটনার মধ্যে রয়েছে গতকাল রবিবার রাজধানীর গেণ্ডারিয়া এলাকায় এক নারীকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে গতকাল ধানমণ্ডি লেক থেকে মো. ওমর ফারুক মোল্লা নামের এক তরুণের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে গত ১ অক্টোবর খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়া বাজারসংলগ্ন বাড়িতে তানভীর হাসান শুভ নামের এক তরুণকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গত ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের রাউজানে চাঁদা না পেয়ে এক ঠিকাদারকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শাহজাহানপুর ঝিলপাড় এলাকায় রবিন ও বিশাল নামে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়। একই দিন পুরান ঢাকার কদমতলী এলাকা থেকে এক নারীর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
থামছে না মব সন্ত্রাস : সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) গত সেপ্টেম্বর মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছুতেই দেশে থামছে না মব সন্ত্রাস। গত মাসে দেশে গণপিটুনিতে আরো ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছে। সেই সঙ্গে কমছে না খুন, ধর্ষণ। আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে এসে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বেড়েছে।
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে খালবিল, ঝোপঝাড় থেকে ৫২ জন অজ্ঞাতপরিচয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যার শিকার হয়েছে ৮৩ নারী, যা আগের মাসের চেয়ে আটজন বেশি। গত মাসে ৫৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সামাজিক অস্থিরতা, অসিহিষ্ণুতা, নৈতিক স্খলন প্রভৃতি কারণে সমাজে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আইন-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভাশেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে চাঁদাবাজি ও অবৈধ দখলের অপরাধে এ বছরের ১৫ জুলাই থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ৬৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া প্রায় ৬০ শতাংশই নতুন মুখ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার ঢাকা মহানগরী ও ঢাকা বিভাগে ৩২৩ জন। এদের মধ্যে ২২৩ জনই নতুন মুখ। এক মাসে গ্রেপ্তার হওয়া ৬৫০ জনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি রাজনৈতিক কর্মী।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন. চাঁদাবাজি একটি সামাজিক সমস্যা। চাঁদাবাজির জন্য নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান।
সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ