ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের বিপুল সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের নামে ঢাকার তোপখানা রোডে ২০৭ কোটি টাকায় জমি কেনার সময় ২৮ কোটি টাকা ভাগাভাগি হয়, যার মধ্যে নজরুল ৬ কোটি টাকা পান।
গতকাল দুদক উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম জানান, নজরুল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জবানবন্দি দেওয়া ও লেখার পর তাতে সই করতে অস্বীকার করেন। তবে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তার বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
দুদক সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে নজরুল ইসলাম স্বীকার করেন তিনি ও তার পুরো পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ২০১৫ সালে তিনি ৫ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ কোটি টাকার বেশি) ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েলিংটনে একটি বাড়ি কিনেছেন। ২০১৪ সালে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের নামে ঢাকার তোপখানা রোডে ২০৭ কোটি টাকায় জমি কেনার সময় ২৮ কোটি টাকা ভাগাভাগি হয়, যার মধ্যে তিনি ৬ কোটি টাকা পান। এ ছাড়া জমি বিক্রেতা আজহার হোসেন খানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তার কাছ থেকে নিজের হিসাবে ১০ কোটি ও স্ত্রীর হিসাবে সাড়ে ৯ কোটি টাকা স্থানান্তর করে বিদেশে পাচার করেন। এ ছাড়া কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এম এ খালেক তার নিজের ও ঘনিষ্ঠজনদের নামে ১১টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৫৯১ কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাৎ করেন। এই অর্থ আত্মসাতে নজরুল ইসলামসহ অন্য কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন বলেও তিনি স্বীকার করেছেন।
দুদক বলছে, নজরুল ইসলামের ঘোষিত ও অঘোষিত সম্পদের পরিমাণ ২০০ কোটিরও বেশি। তার নামে ও নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্পদগুলোর মধ্যে রয়েছে- বারিধারায় ৮ কাঠা জমির ওপর ‘পুতুল হাউস’ নামে বিদেশিদের ভাড়ার জন্য নির্মিত ট্রিপ্লেক্স বাড়ি, গুলশান-১ এ ভাসাবির পেছনে ৩ হাজার ২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, বারিধারা ডিওএইচএসে ২ হাজার ৮৪১ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, গুলশান-২ এ ৫ কাঠার ওপর দুই তলা অফিস ভবন, নারায়ণগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়ায় এম এ খালেক ও আজহার হোসেনের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় ‘প্রাইম শপ’ নামে ১৮ কোটি টাকার কোম্পানি, যাত্রাবাড়ীতে ২ কোটি টাকার সম্পদ, নিকুঞ্জে ৩ কাঠার ওপর আরেকটি ‘পুতুল হাউস’ নামে ডুপ্লেক্স বাড়ি, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে আলু চাষের জন্য ক্রয় করা জমি, ভাটারায় ৩ হাজার ৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন সম্পদ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী সিকিউরিটিজ, ফারইস্ট ইসলামী প্রপার্টিজ, সিভিসি ফাইন্যান্স ও ফারইস্ট ফাইন্যান্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১৫-২০ কোটি টাকার শেয়ার।