বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ বহুমুখী বাণিজ্য ও যাত্রী পরিবহন রুট উন্নয়ন প্রকল্পের ৯ বছর পার হলেও তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে থাকলেও অনেক কাজ এখনো শুরু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বৈশ্বিক অর্থায়নকারী সংস্থাটি। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যৌথ দল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। এদিকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো এখনো অসম্পূর্ণ থাকায় খরচ ও সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) দায়িত্বে থাকা এ প্রকল্পের অধীনে পাগলা, নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুর নদীবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণকাজের বড় অংশ এখনো সম্পন্ন হয়নি। ফলে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, পাগলা কার্গো টার্মিনাল এবং নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুর যাত্রী টার্মিনাল নির্মাণকাজ এগোয়নি। এগুলো শেষ না হলে প্রকল্পের মূল লক্ষ্য পূরণ হবে না। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, গত ৯ বছরে মাত্র ৬৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে সংস্থাটি প্রকল্প শেষ করতে আরও দুই বছর সময় বাড়িয়ে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে।
২০১৬ সালের জুলাইয়ে ৩৬ কোটি মার্কিন ডলার অর্থায়নে ‘চট্টগ্রাম-ঢাকা-আশুগঞ্জ নৌপথ খনন এবং টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প’ শুরু হয়। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্প শেষ করার কথা থাকলেও কাজের ধীরগতির কারণে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে এখন পর্যন্ত অগ্রগতি মাত্র ৬২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর একাধিক ঠিকাদার কাজ ছেড়ে চলে যাওয়ায় টার্মিনাল নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায়। নতুন ঠিকাদার নিয়োগের জন্য পুনরায় দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি চলছে। বর্তমানে শুধু নৌপথ খননের কাজ চলছে, তবে টার্মিনাল নির্মাণ বছরের পর বছর আটকে আছে।
এদিকে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন কমিয়ে আনার কারণে প্রকল্প ব্যয়ও পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা, যা কমিয়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পের সংশোধিত প্রস্তাব এখন কমিশনে পর্যালোচনাধীন। এটি দেশের জন্য কার্যকর মনে হলে অনুমোদনের সুপারিশ করা হবে।
উল্লেখ্য, প্রকল্পের আওতায় আশুগঞ্জ কার্গো টার্মিনাল, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ ও শ্মশানঘাট যাত্রী টার্মিনাল, ডেক অ্যান্ড ইঞ্জিন পারসোনাল ট্রেনিং সেন্টার (ডিইপিটিসি) নারায়ণগঞ্জ আধুনিকায়ন, ১৩টি লঞ্চঘাট উন্নয়ন, মালামাল খালাস সরঞ্জাম ও পরিদর্শন জাহাজ কেনা এবং ১৬টি নৌপথে খননকাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।