আধুনিক সময়ে চা পান করেন না এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। সারা পৃথিবীতে পানির পর যে পানীয় মানুষ আগ্রহভরে গ্রহণ করে থাকে, সেটি হচ্ছে চা। বন্ধু-বান্ধবদের আড্ডায়, পত্রিকা পড়ার সময় চা ছাড়া কি চলে! তা ছাড়া চা-ই একমাত্র পানীয়, যা হৃদরোগসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখে।
গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধমনির ভেতরের দেয়ালে কোলেস্টেরল জমার প্রক্রিয়ায় বাধা দেয় এবং ক্যানসার কোষের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে চেষ্টা করে। চা একেকজন একেকভাবে পান করেন। কেউ লিকার চা পছন্দ করেন, কেউ দুধ চা, কেউ বা লেবু চা।
সাধারণের ধারণা, লিকার চা পান করা সবচেয়ে উপকারী। কিন্তু সম্প্রতি পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ধারণাটি ঠিক নয়। কারণ চায়ের পাতা ফুটন্ত পানিতে অত্যন্ত তিন মিনিট ভিজিয়ে রাখলেই লিকার চা তৈরি হয়ে যায়। এই লিকার চায়ের মধ্যে থাকে ট্যানিন নামক রাসায়নিক পদার্থ, ক্যাফেইন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ অন্যান্য উপাদান।
লিকার চায়ে ট্যানিন ও ক্যাফেইনের মাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। লিকার চায়ের মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন অস্থিরতা, বমি, পাকস্থলীতে বাড়তি এসিড নিঃসরণজনিত অস্বস্তি, নিদ্রাহীনতা ইত্যাদির মতো আরও অনেক সাধারণ উপসর্গের উদ্রেগ করতে পারে। এই বিচারে লেবু চা লিকার চায়ের তুলনায় কিছুটা ভালো। কারণ, লেবুর সাইট্রিক এসিড চায়ের ট্যানিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অতিরিক্ত ট্যানিনকে তলানি হিসেবে জমা করে।
তা ছাড়া লেবু চায়ে লেবু থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন-সি’র উপকারটুকুও পাওয়া যায়, যদি চায়ের লিকার সামান্য পরিমাণ পরিমাণ গরম থাকে। কারণ, অতিরিক্ত গরমে ভিটামিন-সি নষ্ট হয়ে যায়। তবে চিনি ও লেবুর রসের সঙ্গে চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের বিক্রিয়া ঘটে বলে সাম্প্রতিককালে গবেষকরা মনে করেন।
ধারণা করা হচ্ছে, দুধের প্রোটিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সঙ্গে বন্ধনযুক্ত হয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। দুধ চায়ের সুবিধা হচ্ছে, দুধ মেশানোর পর চায়ের ক্ষতিকর পদার্থগুলো বিক্রিয়ার পর থিতিয়ে নিচে জমে থাকে। এই কারণে দুধ চা থেকে ক্ষতির আশঙ্কা সবচেয়ে কম।
কাজেই দেখা যাচ্ছে, ক্ষতির বিবেচনায় লিকার চা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। আর উপকারিতার বিবেচনায় দুধ চা সবচেয়ে বেশি উপকারী। এদিকে লেবু চায়ের অবস্থান মাঝামাঝি।
বিডি প্রতিদিন/৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/এনায়েত করিম