হাতির হামলা রুখতে ভারত সীমান্তে এবার সৌরবিদ্যুৎচালিত বেড়া বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে নেপাল সরকার। এক্ষেত্রে বিদ্যুতচালিত তারের বেড়ায় সফলতা না আসায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। ভারতীয় এক গণমাধ্যম জানায়, রবিবার সকালে ভারত-নেপাল সীমান্তের নকশালবাড়িতে কলকাতার নেপালের কনস্যুলেট জেনারল এবং অ্যাক্ট-হিমালয়ান অরেঞ্জ ট্যুরিজম কাউন্সিলের উদ্যোগে ইন্দো-নেপাল ফ্রেন্ডশিপ মিট-২০১৫ হয়। এতে নেপালের কনস্যুলেট জেনারেল, রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবসহ দুই দেশের সরকারি এবং বেসরকারি তরফে শিল্প বাণিজ্য, পর্যটন, বন, এসএসবি-র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, মূলত সরকারি স্তরে ইন্দো-ভুটান ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশনের ধাঁচে নেপালেও একটি ফোরাম গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এই বৈঠক। বৈঠকে শিল্প বাণিজ্য, পর্যটন, সংস্কৃতি ছাড়াও সীমান্ত বরাবর হাতি-মানুষের সংঘাতের বিষয়টিও প্রাধান্য পায়। বিশেষ করে ভরা ফসলের মৌসুমে দুই দেশে হাতির দলের হানা, হাতির উপর পাল্টা আক্রমণের ঘটনা উঠে আসে।
তখনই নেপালের প্রতিনিধিরা জানান, ওই করিডর বরাবর সৌরবিদ্যুৎচালিত তারের বেড়া বসিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুরু হচ্ছে। ভারতীয় বন দফতর এবং পশুপ্রেমী সংগঠনগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়ে দেন, বেড়া লাগিয়ে হাতির মতো প্রাণীকে কোনো সময়ই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এজন্য দুই দেশের শক্তিশালী বন দফতরের এলিফ্যান্ট স্কোয়াড, নজর মিনার, ওয়ার্নিং সিস্টেম গড়ে তোলা দরকার। যা দিয়ে মৃত্যু বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।
সরকারি হিসাবে, ১৯৭১ সালের পর থেকে ভারত-নেপাল সীমান্ত জুড়ে হাতির সমস্যা বাড়তে শুরু করে। ওপারের বামনডাঙি এবং এপারের লোহাগড়, কলাবাড়ি, টুকরিয়াঝাড় জুড়ে মূলত মে মাস থেকে অক্টোবর, নভেম্বর (ভুট্টা ও ধানের লোভে) হাতির পালেরা ঘোরাঘুরি শুরু করে। অসম থেকে সংঙ্কোশ হয়ে মেচি, তোর্সা পার হয়ে হাতির পালের বিচরণ ক্ষেত্র। বন দপ্তরের কার্শিয়াং ডিভিশনের এটাই হাতির করিডর হিসাবে চিহ্নিত।
কিন্তু অনেক সময়ই হাতিকে ওপারে গুলি করা, বিষ খাওয়ানোর অভিযোগও ওঠে। যদিও নেপালের সরকারির প্রতিনিধিরা অভিযোগগুলো এদিন অস্বীকার করেছেন। গত কয়েক বছরে হাতির হামলায় নেপালের দিকেই অন্তত ৪০ জনের মৃত্যু, ১২ জন বিকলঙ্গ হওয়া ছাড়াও প্রচুর বাড়িঘর এবং শস্যের ক্ষতি হয়েছে। ১১টির মত হাতির মৃত্যুও হয়েছে। তেমনি এপারেও ৮৪ জনের মৃত্যু ছাড়াও ৮টি হাতির মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। কয়েকটি মৃত হাতির শরীরে গুলির চিহ্নও মিলেছে।
সরকারি সূত্র জানায়, বিশ্ব ব্যাংকের প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকায় নেপালের ইলাম থেকে কাঁকরভিটা পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার হাতির করিডরে লোহার তারের বেড়া বসানো হচ্ছে। গত মাস থেকেই ওই কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। কয়েক বছর আগে হাতির করিডরের কিছু কিছু এলাকায় এক দফায় বিদ্যুৎ চালিত তারের বেড়া বসানো হয়েছিল। কিন্তু বিদ্যুতের সমস্যার কারণে তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এজন্য এবার সৌরবিদ্যুৎচালিত বেড়া বেছে নেওয়া হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৭ মার্চ ২০১৫/শরীফ