বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক লীলা মজুমদার বা সত্যজিৎ রায়ের একাধিক গল্পে উঠে এসেছে কুকুর-বিড়াল প্রেতের কথা। পশ্চিমা বিশ্বে তো কুকুর-বিড়াল-ঘোড়া ভূতের দাপট সাংঘাতিক। একটা রসিকতাও অনেকে করে থাকেন, ঘোড়ায় চড়া যোদ্ধা ভূত মানে সওয়ার ও ঘোড়া অর্থাৎ জোড়া ভূত।
তবে প্যারানর্মাল অনুসন্ধানীরা এই ব্যাপারটাকে কিছুটা হলেও আলাদা চোখে দেখেন। তাদের অনুসন্ধানের বিষয় মূলত মানুষের বিদেহী আত্মা। সেই সন্ধান করতে যেয়ে তারা মাঝে মাঝেই ঝামেলায় পড়েছেন এই সব না-মানুষী ভূতের উপদ্রবে।
কখনও প্ল্যানচেটে হামলে পড়েছে কুকুরের ভূত, কখনও বা পোড়ো বাড়িতে ভূতের সন্ধানে গিয়ে সারা রাত সহ্য করতে হয়েছে বিড়াল ভূতের জ্বালাতন। সাধারণত ধারণা করা হয় অতৃপ্ত আত্মাই ভূত বা প্রেত প্রাপ্ত হয়। বিড়াল-কুকুর-ঘোড়া ইত্যাদির কি তৃপ্তি বা অতৃপ্তি রয়েছে, যা তাদের ইহলোক থেকে বিদায় নেওয়ার পরেও তাড়া করে ফিরিয়ে আনে প্রেতলোকের ছায়াচ্ছন্ন জগতে। এ বিষয়ে প্যারানর্মালবিদরা যে তত্ত্ব ব্যক্ত করেন তা বেশ চমকপ্রদ। তাদের মতে—
১। জীবিত প্রাণী হিসেবে মানবেতরদের আত্মা অবশ্যই বর্তমান। সুতরাং তাদের প্রেত হতে বাধাটা নেই।
২। অগণিত মানুষ অনুভব করেছেন, তাদের পোষা প্রাণীর মৃত্যুর পরে বেশ কিছু এমন ঘটনা ঘটেছে, যার আপাত কোনও জাগতিক ব্যাখ্যা সম্ভব নয়।
৩। ২০১৩-এ ইউটিউবে আপলোড করা একটি ভিডিও আজও বেশ ভাইরাল হয়ে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এটির ব্যাখ্যা কী হতে পারে, প্যারনর্মালবিদরা প্রশ্ন করেন। দেখুন সেই ভিডিও—
৪। আমেরিকার প্রাচীন বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন, কুকুর-বিড়াল বা অন্য প্রাণীরা অতিরিক্ত অনুভূতিসম্পন্ন জীব। তাদের অপ্রাকৃত অনুভূতিও মানুষের চাইতে অনেক বেশি। যে কোনও অশুভকে তারা সবার আগে টের পায়। সে কারণে তাদের আত্মাও মানুষের চাইতে অতিমাত্রায় অনুভূতিপ্রবণ। জাগতিক বিশ্ব থেকে বেরিয়ে আসার পরে তারা অনুভূতিগত কোনও বিশেষ কারণে ফিরে ফিরে আসে তার পুরনো বিশ্বে।
৫। মানবেতর প্রাণীদের আসক্তির বহু কাহিনি মানব সমাজেই পরিচিত। পোষা প্রাণীদের অনেকেই তার মালিকের টানে ফিরে আসে মৃত্যুর পরেও, এমন উদাহরণ কম নেই প্যারানর্মাল জগতে।
৬। নেটিভ আমেরিকানদের কোনও কোনও উপজাতির মধ্যে এমন এক টোটেম-উপাসনা বিদ্যমান ছিল, যেখানে তারা বিশ্বাস করত, এই টোটেমগুলি মানবেতর প্রাণীদের আত্মা দ্বারা পরিচালিত হয়। এই আত্মারা আবার মাঝে মাঝে ফিরেও আসে। অনেক সময়ে এই আত্মারা উপজাতির পথপ্রদর্শকও হয়ে ওঠে।
৭। অনেকে প্রশ্ন করেন, আজ পর্যন্ত যত মানবেতর প্রেতের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, তাদের বেশিরভাগই পোষা প্রাণী। তবে বন্য প্রাণীদের নিয়ে প্যারানর্মালবিদরা এক আশ্চর্য যুক্তি দেন। তাদের মতে, পোষা প্রাণীদেরই আসক্তির পরিমাণ সর্বাধিক। কিন্তু মুক্ত বন্যপ্রাণ অনেকটাই আসক্তিহীন। সে কারণে তারা সাধারণত প্রেত ক্ষমতা প্রাপ্ত হয় না।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৫ মার্চ, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-৫