ঘটনাটা আজকের না। প্রায় দশ যুগ আগে, কেনিয়ায় তখন রেলপথ বসছে। সাভো নদীর উপরে একটি সেতু নির্মাণের জন্যে চলছে বিপুল কর্মকাণ্ড। আর ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়াররাও বন কেটে বিস্তৃত করতে বদ্ধপরিকর। ভারতীয় কন্ট্রাক্টররা কুলি সরবরাহ করছেন, আর আফ্রিকান কুলিরাও মহা উৎসাহে কাজ করছেন। আর এরই মধ্যে বনে দেখা দিল আতঙ্ক। রাতের অন্ধকারে একে একে উধাও হয়ে যেতে লাগল কুলিরা। ধারণা করা হলো, এটি ‘অপদেবতা’র কাজ।
তবে ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার লেফ্টেন্যান্ট কর্নেল জন প্যাটারসন খতিয়ে দেখে বুঝতে পারলেন এই অপকীর্তির পিছনে কোনো ‘অপদেবতা’ নেই। একের পরে এক কুলি উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটাচ্ছে দুই মহাপরাক্রমশালী সিংহ। এখানেই খটকা লাগে প্যাটারসনের। কারণ, সিংহ সাধারণত মানুষকে আক্রমণ করে না। খাদ্যের প্রয়োজনে তো নয়ই। সিংহের প্রধান খাদ্য হল তৃণভোজী বড় প্রানী। ঠিক কেন ওই দুই সিংহ কুলি বস্তিকে বেছে নিল তাদের খাদ্য সংগ্রহের জন্য, তা প্যাটারসন বুঝতে পারেননি।
দীর্ঘ অভিযানের পর প্যাটারসন হত্যা করতে সমর্থ হন ‘গোস্ট’ ও ‘ডার্কনেস’ নামে পরিচিত ওই দুই ত্রাসকে। পরে, ১৯০৭ সালে প্যাটারসন স্বয়ং রচনা করেন ‘দ্য ম্যানইটার্স অফ সাভো’ নামের একটি বই। পরবর্তী কালে সাভোর মানুষখেকোদের খুলি দুটো শিকাগোর দ্য ফিল্ড মিউজিয়াম এ রক্ষিত হয়। শতবর্ষের পুরনো রহস্য ভেদ করতে সম্প্রতি এগিয়ে এলেন ভ্যান্ডেরবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওইকোলজিস্ট ল্যারিসা ডেস্যান্টিস এবং তাঁর গবেষক দল।
সিংহদের খুলি পর্যবেক্ষণ করে তারা দেখতে পান, তাদের দাঁতে কিছু সমস্যা ছিল। দুই সিংহের একটির স্বদন্ত ভাঙা ছিল। বেশ কিছু দাঁত ক্ষয় হয়ে ভয়াবহ আকার নিয়েছিল। এ থেকে প্রবল দাঁতব্যথা হতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষক দলের পশুচিকিৎসকরা। এই যন্ত্রণা থেকেই সে সহজতর শিকার মানুষকে বেছে নেয়। পরে তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার সঙ্গী সিংহটি।
বিডি-প্রতিদিন/৩ জুন, ২০১৭/ওয়াসিফ