বিকৃত মস্তিষ্কের জাভেদ ইকবাল, যিনি বিশ্ব ইতিহাসের দুর্ধর্ষ এক সিরিয়াল কিলার। নিজের মায়ের প্রতিশোধ নিতে ১০০ মাকে কাঁদাতে চেয়েছিলেন তিনি। জাভেদের ভাষ্য মতে, তার সব ক্ষোভ ছিল শিশুদের উপর। তাই একের পর এক শিশুকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে নির্মমভাবে খুন করতে থাকেন।
জানা গেছে, সাদামাটা জীবন ছিল জাভেদের। খুবই ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন তার বাবা। সুখেই জীবন কাটছিল জাভেদের। কিন্তু ধর্ষণের এক মামলায় জেলে যেতে হয় তাকে। এ ঘটনায় কেঁদে কেটে মারা যায় তার মা। এতে খুনের নেশা মাথায় চাপে তার। নিজের মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ‘১০০ মাকে কাঁদাতে’ প্রতিজ্ঞা করেন।
জাভেদ ভয়ানক সেই প্রতিজ্ঞা পূরণে ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের টার্গেট করতেন। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, ইকবাল শুধু ছেলে শিশুদেরকে ধর্ষণ করে হত্যা করতেন। তিনি কোনো কন্যাশিশুর ক্ষতি করেননি। তিনি বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ছেলে শিশুদেরকে কাছে ডাকতেন।বালকদের আকৃষ্ট করতে জাভেদ একটি ভিডিও গেমসের দোকান খুলেছিল। সস্তায় বা বিনামূল্যে গেমস খেলার টোকেন দেয়া হতো সেখান থেকে। এভাবে স্থানীয় বালকদের আখড়া হয়ে ওঠে দোকানটি। সেখানে মাঝে মাঝে মেঝেতে ১০০ রুপির নোট ফেলে রাখতো জাভেদ। এরপর ১০০ রুপি চুরি হয়েছে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে তল্লাশি করতো। এভাবে চোর সাব্যস্ত ধরে পাশের একটি ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করতো।
তবে ভিডিও গেমসের দোকানের ফেলা টোপ থেকে সরে গিয়ে জাভেদ গরিব, রাস্তায় রাত কাটানো বালকদের টার্গেট করা শুরু করে। আবার পত্রিকা মারফত পত্রমিতালি করেও বালকদের ফাঁদে ফেলে অপহরণ করতো জাভেদ। এরপর নিজের বাসায় নিয়ে ওই বালকদের ধর্ষণ এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করতো। এরপর মৃতদেহগুলোকে কেটে টুকরো টুকরো করে সেগুলো হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড দিয়ে গলিয়ে দিতো।
এভাবে এক বছরে ১০০ শিশু হত্যার নারকীয় মিশন শেষ করে ১৯৯৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর ধরা দিয়েছিলেন জাভেদ। তবে সরাসরি পুলিশ স্টেশনে না গিয়ে উর্দু সংবাদপত্র ডেইলি জাঙ-এর অফিসে হাজির হন তিনি। সেখানে গিয়ে নির্লিপ্তভাবে তিনি বলেছিলেন, আমি জাভেদ ইকবাল, ১০০টি বাচ্চার হত্যাকারী।
এমন ঘটনা সামনে আসতে পাকিস্তানে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম হয়। জাভেদকেও শিশুদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, সেভাবে হত্যার দাবি তুলতে থাকে মানুষজন। পরে ২০০০ সালের ১৬ মার্চ বিচারপতি আল্লাহ বকশের প্রাথমিক রায়ে মানুষজনের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন ঘটে।
রায়ে তিনি বলেছিলেন, জাভেদ ইকবাল ১০০ জনকে হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। তাকে ১০০ বার শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হবে। এরপর তার শরীরকে ১০০ খণ্ড করে সেগুলো অ্যাসিডে দ্রবীভূত করা হবে। ঠিক যেমনটা সে তার শিকারদের সঙ্গে করেছে। তবে রায় বাস্তবায়নের আগেই আত্মহত্যা করেন নৃশংস এই খুনি। সূত্র : ইন্ডিয়া টিভি।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক