জাপানের শিকোকু দ্বীপের কাছে সেতো অভ্যন্তরীণ সাগরের ছোট্ট দ্বীপ আওশিমা। বিড়ালের সংখ্যায় বিখ্যাত এই দ্বীপে মানুষের চেয়ে বিড়াল বেশি। অথচ এই দ্বীপটি এখন জনসংখ্যা সংকট ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে বিলুপ্তির পথে।
আওশিমায় একসময় ২০০টি বিড়াল ছিল। মাছ ধরার জাল রক্ষা করতে জেলেরা এগুলো এনেছিল। বর্তমানে সেখানে মাত্র ৮০টি বিড়াল রয়েছে। অধিকাংশই বয়স্ক, এবং দীর্ঘদিনের প্রজননজনিত কারণে অনেকেই চোখে দেখতে পায় না কিংবা শ্বাসকষ্টে ভুগছে।
দ্বীপটির একমাত্র বাসিন্দা ৭৪ বছর বয়সী নাওকো কামিমোতো এবং তার স্বামী হিদেনোরি। নাওকো বলেন, যদি কোনো বিড়াল এক সপ্তাহ ধরে দেখা না যায়, আমরা ধরে নিই সে মারা গেছে। আমরা তখন তার মৃতদেহ খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আওশিমায় প্রায় ৯০০ জন বাস করতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে বয়স্ক জেলেরা ও তাদের পরিবার মূল ভূখণ্ডে চলে যান, বিড়ালগুলোকে রেখে যান। ২০১৭ সালে দ্বীপে মাত্র ১৩ জন বাসিন্দা ছিলেন, আর এখন সেখানে মাত্র চারজন।
বিড়ালের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ২০১৮ সালে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিড়ালদের গণ বন্ধ্যাকরণ ও নির্বীজকরণের উদ্যোগ নেয়। এরপর থেকে কোনো নতুন বিড়াল জন্মায়নি। এদিকে দ্বীপে প্রাথমিক চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ভবিষ্যতে বাসিন্দাদের দ্বীপ ছেড়ে যেতে হতে পারে।
নাওকো বলেন, আমি আগামী পাঁচ বা দশ বছরের পরিকল্পনা করছি না। আমরা একদিন একদিন করে বেঁচে আছি। তবে এমন একদিন আসবে, যখন এখানে কোনো মানুষ থাকবে না, বিড়ালও থাকবে না।
দ্বীপের বিড়াল সংরক্ষণ সমিতির সদস্য কিয়েচি তাকিনো বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি এড়াতে। যদি বিড়ালের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা না হতো, তবে দ্বীপের পরিস্থিতি সহ্যের বাইরে চলে যেত।
বিড়ালদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বীপে তাদের দেখভালের জন্য লোকবল না থাকায় কিছু বিড়ালকে নতুন আশ্রয়ে নেওয়া হতে পারে। এই দ্বীপে প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এটি বিলুপ্তির পথে।
আওশিমা এখনো পর্যটকদের কাছে বিড়ালের জন্য পরিচিত। প্রতিদিন দুইবার ফেরি আসে, যেখানে পর্যটকরা এক ঘণ্টার জন্য বিড়ালদের সঙ্গে সময় কাটান। নাওকো তাদের খাবার দেন, ওষুধ দেন এবং পর্যটকদের সঙ্গে তাদের মেলামেশা তদারকি করেন।
নাওকো বলেন, এই দ্বীপ কোনো পর্যটন স্পট বা বিড়াল থিম পার্ক নয়। এটি একটি জীবন্ত দ্বীপ। আমরা যতদিন আছি, বিড়ালদের যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করব।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল