প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ উন্নয়ন এজেন্ডার পটভূমিতে দারিদ্র্য ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইসহ ৩টি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর ওপর গুরুত্বারোপ করে এশিয়া ও আফ্রিকার নেতৃবৃন্দকে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ দক্ষিণ বিশ্ব (গ্লোবাল সাউথ) গড়ার লক্ষ্যে একত্রে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্তের আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমরা সম্মিলিতভাবে এমন এক স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তুলতে পারবো-যা হবে নির্যাতন, অসহিষ্ণুতা, সহিংসতা ও চরমপন্থামুক্ত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৫ উন্নয়ন এজেন্ডা পরবর্তী পরিবর্তনশীল করণীয় ও লক্ষ্যের রূপরেখা নির্ধারণ করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি ৩টি উন্নয়ন ইস্যুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রথমত : ক্ষুধা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই, দ্বিতীয়ত : সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থা দমন এবং তৃতীয়ত : ঘনিষ্ঠ ও দৃঢ় সহযোগিতা।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার সকালে বালাই সিদাং জাকার্তা কনভেনশন সেন্টারে দ্বিতীয় এশিয়ান-আফ্রিকান শীর্ষ সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের ভাষণে এ আহ্বান জানান। ৩ দিনব্যাপী এ সম্মেলন শুরু হয়েছে আজ বুধবারই।
টেকসই উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও নিরাপত্তা এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অস্থিতিশীল বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক উন্নয়নে অব্য্যহত ব্যাপক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক্ষেত্রে তিনি সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম বা জাত নেই। যে কোন হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে যে কোন ব্যক্তি ও সংগঠনকে আমাদের ভূমি ব্যবহার করতে না দেওয়ার নীতিতে সকলকে অটল থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির মোকাবেলায় দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করছে। তারা (স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি) আমাদের দেশের উদার প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধ্বংসে এখনো সক্রিয় রয়েছে। তার সরকার আদর্শিকভাবে সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থাকে পরাজিত করতে গণতান্ত্রিক ও ধর্ম নিরপেক্ষ ধারা শক্তিশালী এবং নারীর ক্ষমতায়ন জোরদার করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতির ইতি টানতে তাঁর সরকার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যা সংঘটনকারীদের বিচারের আওতায় আনতে অঙ্গীকারাবদ্ধ রয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বের অর্ধেক জিডিপির ধারক হচ্ছে দক্ষিণ। এখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অর্ধেক ও বিশ্ব বাণিজ্যের অর্ধেকেরও বেশি সাধিত হয়। এজন্য টেকসই উন্নয়ন ও দক্ষিণের দেশগুলোর স্বনির্ভরতা অর্জনে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাপক উন্নয়ন সত্ত্বেও বিশ্বের ২ দশমিক ২ বিলিয়ন মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে। ৮শ’ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘমেয়াদী ক্ষুধায় ভুগছে এবং ২শ’ মিলিয়ন মানুষ জলবায়ুর প্রভাবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এ প্রেক্ষাপটে গণমুখী, দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈশ্বিক উন্নয়নবান্ধব কৌশল নিশ্চিত করতে বিদ্যমান উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষিণের অর্থনীতিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ আগামী মাসে ঢাকায় ২০১৫ উন্নয়ন এজেন্ডা পরবর্তী পটভূমিতে উচ্চ পর্যায়ের এক দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ত্রিমাত্রিক সহযোগিতার আয়োজন করছে। আমরা আশা করছি এতে আপনাদের সমর্থন, সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে উল্লেখিত সব বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র বিমোচনে বাংলাদেশ উদাহরণ দেওয়ার মতো ভালো ফল করেছে, ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে কমে ২৪ শতাংশে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) অধিকাংশই অর্জন করেছে। বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও গত ছয় বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স তিনগুণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাড়ে ছয়গুণ বেড়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/২২ এপ্রিল, ২০১৫/মাহবুব