ভয়ঙ্কর রূপে গর্জে উঠেছে তিস্তা। বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া ভারি বর্ষণের সঙ্গে উজানে ভারতের দো-মোহনী পয়েন্ট থেকে তিস্তার ঢল বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বাংলাদেশে ধেয়ে আসতে থাকায় ভারত ও বাংলাদেশ অংশের তিস্তা অববাহিকায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত পর্যন্ত তিস্তার পানি ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৪০) ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তিস্তার ভয়াবহ পরিস্থিতির বন্যায় তিস্তা অববাহিকার লাখ লাখ মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এতে দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েও উজানের ঢল সামাল দেয়া যাচ্ছে না। প্রবল পানির তোড়ে ভেঙে গেছে হাতিবান্ধা-বড়খাতা বাইপাস সড়ক, তলিয়ে গেছে লালমনিরহাট-বুড়িমারি মহাসড়কসহ ৬১টি চরের কয়েক লাখ মানুষের বসত-বাড়ি।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তিস্তা ব্যারাজের উত্তরে ফ্ল্যাড ফিউজ এলাকায় টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে লালঝাণ্ডা। উজানের তীব্র পানির প্রবাহে তিস্তা ব্যারাজের ফ্ল্যাড ফিউজটি বিধ্বস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে ফ্ল্যাড ফিউজের উপর দিয়ে যানবাহনসহ সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং সতকর্তায় তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিগণ এবং পানি উন্নয়ন বোডের প্রকৌশলীগণ তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, উজান থেকে তিস্তা নদীতে ভয়াবহ ঢল ধেয়ে আসার খবরে তিস্তা অববাহিকার বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাগণসহ সকল ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিকে তিস্তার বিভিন্ন চর ও গ্রামে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে বলা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারী দফতরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তা, সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে তিস্তার পাড়ের দুর্গতদের সহায়তা করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। এতে তাৎক্ষণিভাবে তিস্তা অববাহিকায় মাইকযোগে প্রচারনা চালিয়ে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা সম্ভব হয়।
এদিকে, উজানের ঢলের সেই পানি বুধবার বিকাল ৩টা থেকে ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সূত্র মতে, উজান থেকে যে ঢল ধেয়ে আসছে তাতে বাংলাদেশে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে তিস্তার ঢল নদী বাম ও ডান তীরের বাঁধ ঘেষে প্রবাহ হওয়ায় বাঁধের হার্ডপয়েন্ট ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তিস্তার ভয়ঙ্কর ঢলের কারণে তিস্তার উপকূলীয় এলাকার লাখ লাখ মানুষের ঘরবাড়ি বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
সানিয়াযান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ বলেন, তার এলাকার পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি বানের পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্থদের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গড্ডিমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বুলু জানান, হাতিবান্ধা-বড়খাতা বাইপাস সড়কটি ভেঙ্গে কয়েক হাজার পরিবার পনিবন্দী হয়ে পড়ছে।
বিডি-প্রতিদিন/০২ জুলাই, ২০১৫/মাহবুব