বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে সংঘটিত অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চলমান প্রকল্প 'বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ' থেকে সরে গেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ বাংলাদেশ অফিসের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, ইলেক্টরাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ইটিআই), ন্যাশনাল আইডেনটিটি রেজিস্ট্রেশন ইউং (এনআইডি), ইউরোপীয় কমিশন, যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ডিএফআইডি এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ইউএসএইড প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ করছে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের আবাসিক অফিস থেকে জানানো হয়েছে, দাতারা বাংলাদেশের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট গণতান্ত্রিক সুশাসন উন্নয়নে চলমান একটি প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। 'বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ' শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১১ সালের ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়। যা সামনের বছরের মার্চে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দাতারা অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ায় চলতি বছরের ৩১ জুলাইয়ে প্রকল্পটি শেষ হয়ে যাবে।
জাতিসংঘ বাংলাদেশ আবাসিক অফিসের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি কে এ এম মোর্শেদ শুক্রবার দুপুরে বলেন, 'দাতারা অর্থায়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় নির্বাচন কমিশনের ওই প্রকল্পটি ৩১ জুলাইয়ের পর আর কার্যকর থাকবে না।' তিনি আরো বলেন, 'অর্থায়ন বন্ধ করার কথা দাতারা জাতিসংঘে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। তবে কী কারণে অর্থায়ন বন্ধ করা হয়েছে, চিঠিতে তা জানানো হয়নি।'
প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'তাদের আমরা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বলেছি, তাই তারা প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। এ প্রকল্পে গত এক-দেড় বছর ধরে কোনো কাজ হচ্ছে না।'
সিটি নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে দাতাসংস্থাগুলো ছাড়াও বিভিন্ন রাষ্ট্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে— এ কারণে জাতিসংঘ প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়াল কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'তারা অসন্তোষ প্রকাশ করলে আমাদের কি করার আছে। তাদের সন্তুষ্ট করার দরকার নেই আমাদের। আমরা মানুষের জন্য কাজ করি, মানুষ সন্তুষ্ট থাকলেই হল। তারা সন্তুষ্ট হল কিনা, তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না। মানুষ সন্তুষ্ট থাকলেই হবে।'
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের চলমান প্রকল্পের মূল কার্যক্রম অনেক আগেই বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। যে উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি চলমান ছিল সেই উদ্দেশ্যও শেষ হয়েছে। এখন প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মূল উদ্দেশ্য উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। সূত্রগুলো আরও জানায়, সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং সরকারকে চাপে রাখতে প্রতীক হিসেবে দাতারা ওই প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করেছে।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক সূত্রগুলো আরো জানায়, ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন এবং সর্বশেষ তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংঘটিত বিভিন্ন অনিয়ন ও কারচুপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাতাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ওই অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই ওই প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/ ৩ জুলাই ২০১৫/শরীফ